ইসলামি জীবন ডেস্ক: আওয়ার টাইমস নিউজ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্। আওয়ার টাইমস নিউজ এর সম্মানিত পাঠক/ পাঠিকা বৃন্দ, আশা করছি মহান রবের অনুগ্রহে আপনারা সবাই ভাল আছেন।
দুনিয়া ও চিরস্থায়ী আখেরাতের সফল জীবনের জন্য
নতুন বছর শুরু মানেই আমাদের প্রত্যেকের জন্য নতুন একটি মহামূল্যবান সুযোগ। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মহান রব আল্লাহর দেওয়া বিশেষ নিয়ামত। তাই নতুন বছরের সূচনালগ্নে আমাদের সকলের উচিত নিজেদের পিছনের জীবনকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করা, অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ভবিষ্যতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সমস্ত প্রকার গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার নতুন প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা।
থার্টি ফাস্ট নাইট নামে ই’হুদি-খ্রি’স্টানদের অ’সুস্থ সংস্কৃতি, গান-বাজনা অশ্লীলতা-আতশবাজি ও সমস্ত প্রকার হারাম কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
কারণ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আতশবাজি, ফটকা ফুটানো, ফানোস উড়ানো সম্পুর্ন হারাম এবং ভয়াবহ অপচয়।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন..
> إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ
“নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।”
(সূরা আল-ইসরা: ২৭)
আতশবাজি ফটকা ফুটানো শুধু আমাদের সম্পদের অপচয়ই নয়, বরং এটি পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এটি এমন একটি কাজ, যা আল্লাহর দেওয়া সম্পদকে উদ্দেশ্যহীনভাবে নষ্ট করে। তাই আমাদের উচিত নতুন বছরকে উৎসবের নামে হারাম কাজে ব্যয় না করে, বরং আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত করা।
কাজেই আমাদের প্রত্যেকের উচিত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেদের পূর্বের গুণাহের প্রতি অনুতপ্ত লজ্জিত হয়ে খালেস নিয়তে তাওবা করে নতুন বছরটি গুনাহমুক্তভাবে শুরু করা।
হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
> “التائب من الذنب كمن لا ذنب له”
“যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে তাওবা করে, সে এমন ব্যক্তির মতো, যার কোনো গুনাহ নেই।”
(সুনান ইবন মাজাহ: ৪২৫০)
আমাদের জীবনে নানা সময় আমরা গুনাহ করে থাকি। তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। নতুন বছরের শুরুতেই আমাদের প্রত্যেকের উচিত একনিষ্ঠভাবে অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাওবার মাধ্যমে মহান রবের আল্লাহর কাছে ফিরে আসা।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
> يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
“হে মুমিনগণ, আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো।”
(সূরা আত-তাহরিম: ৮)
নতুন বছরটি যেভাবে শুরু করবেন।
১) আত্মশুদ্ধি এবং তাওবা হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাই নতুন বছরের শুরুতেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং আগামীর জন্য সৎকর্মের প্রতিজ্ঞা করুন।
২) নামাজ ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা।
নামাজ হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সেরা উপায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
> إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
“নামাজ অবশ্যই অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”
(সূরা আল-আনকাবুত: ৪৫)
নতুন বছরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকভাবে আদায় করার সংকল্প করুন।
৩. কোরআন তিলাওয়াত ও হাদিস অধ্যয়ন
নতুন বছর শুরু করুন কোরআনের বার্তা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে। এটি আমাদের জীবনে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
৪. হারাম কাজ বর্জন
যে কাজগুলো ইসলামে হারাম, যেমন: অপচয়, মিথ্যা বলা, চোগলখুরি, এবং মানুষের প্রতি অন্যায় করা—এগুলো সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন।
৫. পরোপকার ও দানশীলতা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
> “خير الناس أنفعهم للناس”
“সেরা মানুষ সে, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।”
(মুসনাদ আহমাদ: ২৩৪০৯)
দুঃস্থ ও অসহায়দের সহায়তা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন।
নতুন বছর আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে আরও কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ। বছরের শুরুতে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে। বরং তাওবার মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আমরা আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে পারি।
আসুন, আমরা সকলেই নতুন বছরের যাত্রা শুরু করি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। মহান রব আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং গুনাহ্ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: হুসাইন আল আজাদ ইবনে নোয়াব আলী
(বিশিষ্ট লেখক ও ইসলামী গবেষক।)