
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাড়ৈই আলগী গ্রামের তরুণ মাঈন উদ্দিনের (২৪) জীবন বর্তমানে এক গভীর সংকটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। মাঈন উদ্দিন ছিলেন একজন রিকশাচালক। চার বছরের কন্যা রিদনী, স্ত্রী জেসমিন, এবং বাবা-মাকে নিয়ে চলত তার ছোট্ট সংসার।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই নরসিংদীর ইটাখোলা মোড়ে শিক্ষার্থীদের ডাকে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন মাঈন। এই আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। একটি গুলি তার ডান হাত ভেদ করে বেরিয়ে যায়, আরেকটি পেটের নিচের অংশে ঢুকে ভেতরে আটকে থাকে।
তাকে প্রথমে অর্থোপেডিক হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে তার জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়, যেখানে তার খাদ্যনালীতে ছিদ্র ধরা পড়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মাঈনের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।
মাঈনের পেটের খাদ্যনালী পুনর্গঠনের জন্য কোলোস্টোমি ব্যাগ স্থাপন করা হয়, যাতে তিনি সাময়িকভাবে মল ত্যাগ করতে পারেন। পরে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর তার রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, যা তাকে স্বাভাবিক নিয়মে মলত্যাগের সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়।
বর্তমানে মাঈন উদ্দিন শারীরিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ভবিষ্যত সুস্থতার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা ও সহায়তা প্রয়োজন। জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, “মাঈনের পরিস্থিতি আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তার জীবন সংগ্রাম এবং হতাশা আমাদের সকলের জন্য শিক্ষণীয়।
মাঈনের এই দুর্বিষহ জীবন শুধু তার ব্যক্তিগত গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি বাস্তব উদাহরণ। মাঈনের চিকিৎসার জন্য সমাজের সকল স্তরের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
এই গল্পটি আমাদের সকলের জন্য একটি বার্তা বহন করে—বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আহতদের পুনর্বাসনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি।