আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: ইসলাম আমাদের জীবনকে শান্তিময় ও সুরক্ষিত রাখার জন্য বিভিন্ন আমল ও দোয়া শিখিয়েছে। টোনা, জাদু, কুদৃষ্টি এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য কুরআন ও হাদিসে কিছু কার্যকর আমল উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিক সময় এবং উপায়ে এসব আমল করলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায় এবং বিপদ থেকে সুরক্ষা মিলতে পারে। এখানে কুরআন ও হাদিসের আয়াতগুলো আরবিতে তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে জানিয়ে দেবে কখন কোন আমল করবেন।
১. সূরা আল-ইখলাস, আল-ফালাক ও আন-নাস পাঠ (সকাল ও সন্ধ্যায়)
আরবি:
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
অর্থ:
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি জন্ম দেননি এবং তাঁকে জন্ম দেওয়া হয়নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা আল-ইখলাস)
আরবি:
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় চাই প্রভাতের পালনকর্তার কাছে। তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে, আঁধারের অনিষ্ট থেকে, যারা ফুঁ দেয় গ্রন্থিতে তাদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। (সূরা আল-ফালাক)
আরবি:
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلَٰهِ النَّاسِ مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের উপাস্যের কাছে। সেই শয়তানের অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। যে জিন ও মানুষের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন-নাস)
কখন করবেন:
প্রতিদিন ফজরের পর এবং মাগরিবের পর এই সূরাগুলো তিনবার করে পড়ুন।
২. আয়াতুল কুরসি (প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর)
আরবি:
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থ:
আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, স্থায়িত্বশীল। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। যা কিছু আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে রয়েছে, সব তাঁর। তাঁর অনুমতি ছাড়া কে সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন যা তাদের সামনে ও পেছনে। তাঁর জ্ঞান থেকে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে এবং তা রক্ষা করা তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি মহীয়ান, সর্বোচ্চ। (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
কখন করবেন:
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া উচিত।
৩. “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” বলা (প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে)
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
অর্থ:
আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
কখন করবেন:
কোনো কাজ, যেমন খাওয়া-দাওয়া, যাত্রা, অফিসের কাজ বা পড়াশোনা শুরু করার আগে।
কেন করবেন:
“বিসমিল্লাহ” বলা আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং যেকোনো খারাপ শক্তি ও কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।
৪. কুরআনের আয়াত পড়া পানি বা তেলে ফুঁ দিয়ে ব্যবহার (যখন শরীরে কোনো সমস্যা বা ব্যথা থাকে)
কখন করবেন:
শরীরে কোনো ব্যথা বা সমস্যার সৃষ্টি হলে, কুরআনের আয়াত (যেমন সূরা আল-ফালাক ও আন-নাস) পড়ে পানি বা তেলে ফুঁ দিন এবং তা ব্যবহার করুন।
কেন করবেন:
এটি শরীরের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক শান্তি দেয়।
৫. “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম” (যেকোনো অশুভ কাজ থেকে আগে)
আরবি:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
অর্থ:
আমি শয়তান শাপিতের আছর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
কখন করবেন:
যখন মনে হয় আপনি কোনো অশুভ শক্তি বা শয়তান দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন বা কোনো কাজ শুরু করার সময়।
৬. ইস্তেগফার (নিয়মিত তওবা ও ইস্তেগফার করুন)
আরবি:
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي
অর্থ:
হে আমার পালনকর্তা! আমি নিজেকে অত্যন্ত অন্যায় করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সূরা কাসাস: ১৬)
কখন করবেন:
প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর।
নামাজের পরও ইস্তেগফার করা ভালো।
৭. সকাল ও সন্ধ্যার বিশেষ দোয়া (প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায়)
আরবি:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنتَ اللَّهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنتَ
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি সকালে তোমার সাক্ষী দিচ্ছি এবং তোমার আছর বাহক, ফেরেশতাগণ ও সকল সৃষ্টির সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি একমাত্র আল্লাহ, তোমার ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই।
কখন করবেন:
প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় দোয়া পাঠ করুন, যা শয়তান ও জাদু থেকে রক্ষা করে।
৮. হালাল উপার্জন (বিভিন্ন পরিস্থিতিতে)
কখন করবেন:
সবসময় হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন এবং হারাম থেকে দূরে থাকুন।
কেন করবেন:
হারাম উপার্জন এক ধরনের অনিষ্ট ডেকে আনে, যা মানুষের উপর টোনা বা জাদুর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। হালাল উপার্জন শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসে।
৯. দান-সদকা (যতটা সম্ভব করুন)
কখন করবেন:
প্রতিদিন কিছু না কিছু দান বা সদকা করুন, বিশেষত সকালে বা মাগরিবের আগে।
কেন করবেন:
দান-সদকা আল্লাহর রহমত আকর্ষণ করে এবং যেকোনো নেতিবাচক শক্তি বা টোনা থেকে রক্ষা করে।
১০. শরীরের কভার বা “আজকার” পড়া (শরীরের অংশ ঢেকে রাখা)
কখন করবেন:
যখন বাইরে যান বা যেখানে হিংসা বা খারাপ চোখ থাকতে পারে।
কেন করবেন:
শরীরের খালি অংশে কুদৃষ্টি পড়তে পারে, তাই শরীর ঢেকে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া “আজকার” বা বিশেষ দোয়া পড়লে আল্লাহ আপনাকে সুরক্ষা দিবেন।
যে কোনো অশুভ শক্তি বা টোনার প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে কুরআন ও হাদিসে নির্ধারিত আমলগুলি নিয়মিত অনুসরণ করুন। সঠিক সময়ে সঠিক আমল পালন করে আপনি নিজের জীবনকে শান্তি ও সুরক্ষায় পরিপূর্ণ করতে পারেন।