
নিউজ করেসপন্ডেন্ট: হুসাইন ইবনে নোওয়াব। আওয়ার টাইমস নিউজ।
জুলাই বিপ্লবের ২৩ বছর বয়সী ময়দানের সাহসী যোদ্ধা আকাশ ছোটবেলা থেকেই ছিল অধম্ম সাহসী, প্রতিবাদী আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়চেতা এক যুবক। মায়ের একমাত্র সন্তান আকাশ, মাকে না জানিয়েই অংশ নিতেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। তার মা বারবার নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, “বাবা, তুই আন্দোলনে যাস না। তোর কিছু হলে আমাকে কে দেখবে?” কিন্তু মায়ের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে আকাশ দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার লড়াই চালিয়ে যান।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেদিন মিরপুর-১০ এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আকাশ। সেদিন পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। গুলিবর্ষণে একের পর এক লাশ পড়ে মিরপুরের রাস্তায়। আকাশ ও তার বন্ধুরা মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর-১০ এলাকায় গিয়ে মিছিলে অংশ নেন। হঠাৎ পুলিশের গুলিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। একপর্যায়ে আকাশ তার বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি আকাশকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন। পরে পাশের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক আকাশকে মৃত ঘোষণা করেন।
আকাশের মা বেবি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ওর এক বছর বয়সে ওর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। গার্মেন্টে কাজ করে ছেলেকে বড় করেছি। ও ছোটবেলায় একটু দুষ্ট ছিল। স্কুলের বদলে বাইরে ঘুরত। ক্লাস ফোরে উঠার পর মেসে খাবার সরবরাহ শুরু করি। তখন থেকে সে ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিতে শিখে।”
আকাশ বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি ফ্রিজ ও এসির কাজ শিখেছিলেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি একটি ডেলিভারি কোম্পানিতে যোগ দেন। করোনার কারণে কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।
তার মা আরও বলেন, “ওর প্রিয় খাবার ছিল হাঁস-মুরগি, গরুর গোশত, আর চিংড়ি মাছ। যেদিন মারা যায়, সেদিনও আমি গরুর কলিজা ভুনা রান্না করেছিলাম। কিন্তু সে আর আসেনি। শেষবার যখন ফোন করলাম, বলল, ‘মা, আমি ভালো আছি। তুমি ঘুমিয়ে থেকো। আমি একটু পর বাসায় আসব।’ কিন্তু সে আর ফিরল না।”
আকাশের মৃত্যুতে তার মা দিশাহারা। সন্তানহারা এই মা সরকারের কাছে মাসিক ভাতা এবং পুনর্বাসনের আবেদন করেছেন। তিনি চান, তার ছেলের স্মৃতি চিরদিন অমলিন রাখতে কোনো রাস্তা বা স্থাপনার নাম তার ছেলের নামে করা হোক।
আকাশের এক বন্ধু রাব্বি বলেন, “আকাশ খুব ভালো ছেলে ছিল। সে সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত। তার সাহসিকতা আমরা কোনোদিন ভুলব না।”
আজ আকাশের আত্মত্যাগের গল্প গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।