
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনার মানে হল, তাঁর নীতি ও সুন্নাহকে আমাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা রাসূল প্রেরণ করেছেন মানুষের জন্য তাঁর আদর্শ অনুসরণের উদ্দেশ্যে, যাতে মানুষ তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে আল্লাহর পথে চলে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
“وما ارسلنا من رسول الا ليطاع باذن الله”
(তরজমা: “আমি রাসূল এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।”- সূরা নিসা, ৪:৬৪)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আরোও বলে..
“فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم، ثم لا يجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما”
(তরজমা: “তবে না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসংবাদের বিচার আপনার উপর অর্পণ না করে; তারপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং তারা তা সর্বান্তকরণে মেনে নেয়।” – সূরা নিসা, ৪:৬৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন এবং সুন্নাহ অনুসরণ করাই সত্যিকার ঈমান এবং ইসলামিক আদর্শ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
“لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة لمن كان يرجو الله واليوم الآخر وذكر الله كثيرا.”
(তরজমা: “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”- সূরা আহযাব, ৩৩:২১)
আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে এই আদর্শে ঢেলে সাজানো আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল আমরা অনেকেই এই সুন্নতকে পরিত্যক্ত করে রেখেছি এবং আমাদের জীবন থেকে ইসলামী আদর্শ দূরে সরে যাচ্ছে।
১. সঠিক জ্ঞান
সাহাবায় কেরাম সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী শুনতেন এবং তাঁর জীবন আদর্শ অনুসরণ করতেন। আজ আমাদের অনেকেই সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত এবং ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। যদি আমরা কুরআন তিলাওয়াত এবং হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝে ও অনুসরণ করি, তাহলে আমরা এই জ্ঞান অর্জন করতে পারব।
২. ঈমান ও নির্ভরতা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ঈমান ছিল একান্ত দৃঢ় এবং তাদের জীবনে তার সুন্নাহ ও আদর্শ ছিল একমাত্র পথ। আজ আমাদের ঈমানের সাথে সাথে আমাদের জীবনেও বিভিন্ন বিভ্রান্তি প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, কিন্তু আমাদের জীবনাদর্শ পশ্চিমা সভ্যতার অনুসরণ করছে।
৩. শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
সাহাবায় কেরাম ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাশীল ও ভক্ত। আজ আমরা মুখে নবীজির প্রতি ভালবাসা ঘোষণা করলেও, আমাদের জীবন ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে সেই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ পায় না।
৪. জীবনে প্রয়োগ
সাহাবায় কেরাম প্রতিটি সুন্নত ও আদর্শ তাঁদের জীবনে বাস্তবায়ন করেছিলেন, অথচ আমরা অনেক সময় মৌলিক বিষয়গুলো থেকেও উদাসীন।
৫. সুন্নতকে জীবিত করা ও বিদআতকে ঘৃণা করা
সাহাবায় কেরাম নবী-আদর্শের প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা এই আদর্শ ও সুন্নতকে পরিত্যাগ করে আধুনিকতার দিকে ঝুঁকেছি।
৬. নিজ সন্তান, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য সুন্নত অনুসরণ করা
সাহাবায় কেরামের মাধ্যমে আমরা শিখেছি যে, তাদের আদর্শ ও সুন্নত শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং তাদের পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্যও ছিল। আমাদেরও তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে এবং আমাদের পরিবার ও সমাজের মধ্যে এই আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে।
আমাদের জীবনে যদি আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ এবং সুন্নতকে গ্রহণ করি, তাহলে আমরা আল্লাহর পথে চলতে পারব এবং পৃথিবী ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারব।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুন আমীন।