আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট:ৎচলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বড় ধরনের সংশোধনের মুখে পড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এডিপির মোট বরাদ্দ থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। যা মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কম।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন, অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রকল্প বাতিল, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতি এবং রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সরকারের পরিবর্তনের ফলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছিল। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে দেখা যায়, বেশ কিছু প্রকল্প অতিরিক্ত ব্যয়ের শিকার এবং রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত হয়েছিল, যা বাস্তবিকভাবে প্রয়োজনীয় নয়। ফলে সেসব প্রকল্প বাতিল করায় বাজেটের আকার সংকুচিত করা হচ্ছে।
এছাড়া, গত কয়েক মাসে এডিপির বাস্তবায়ন গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২১.৫২ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দ ৮১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
মূল এডিপিতে যে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তার মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় এই বরাদ্দ কমিয়ে আনা হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত কয়েক অর্থবছরে সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাজেট কমানো হলেও এবার তা প্রায় ১৮ শতাংশ কমানো হচ্ছে। কারণগুলো হলো:
১. রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল
২. সরকারি তহবিলের ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি
৩. উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি ও ব্যয় সংকোচন নীতি
৪. অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন
৫. রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকা প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (IMED) তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নৌপরিবহন ও পর্যটনসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত কম।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ: মাত্র ৫%
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ: ৯.৬৬%
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়: ১১.৮৪%
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ: ১৬%
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়: ১৮.১৪%
রেলপথ মন্ত্রণালয়: ১৯.৯১%
অন্যদিকে, কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাস্তবায়ন তুলনামূলকভাবে ভালো। যেমন:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়: ৩৬.৫৫%
বিদ্যুৎ বিভাগ: ৩৩.৬৪%
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "অবকাঠামোর চেয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতের ব্যয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশীয় অর্থায়নের চেয়ে বিদেশি অর্থ ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সরকার বলছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই এই বাজেট সংশোধনের মূল লক্ষ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজেট বাস্তবায়নে গতি না বাড়ালে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট কাটছাঁটের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরও ধীরগতির হতে পারে। বিশেষ করে, যেসব খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেসব খাতে বরাদ্দ কমানোর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই বাজেট সংশোধন মূলত প্রয়োজনীয় ব্যয় নিশ্চিত করার জন্য করা হচ্ছে, যাতে অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ অপচয় বন্ধ হয়।