
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। একদিন এই পৃথিবী ধ্বংস হবে, সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, আর শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়—পরকাল। কেয়ামত সেই দিনের নাম, যেদিন প্রত্যেক আত্মা তার কর্মফল অনুযায়ী হিসাবের সম্মুখীন হবে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কেয়ামতের বহু আলামতের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা যদি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে বুঝতে পারব যে আমরা সেই সময়ের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। তাই, এই পবিত্র রমজান মাস আমাদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ, নিজেদের শুধরে নেওয়ার, গুনাহ থেকে মুক্তির, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের।
কেয়ামতের আলামত: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস
কেয়ামতের সময় নির্ধারণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইলমে রয়েছে। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এমন কিছু আলামত জানিয়ে গেছেন, যা কেয়ামতের নৈকট্যের ইঙ্গিত বহন করে।
১. ছোট আলামত:
এসব আলামত কেয়ামতের বহু আগে থেকেই প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন ও তাঁর ইন্তেকাল
সত্যবাদীদের মিথ্যাবাদী বলা হবে, আর মিথ্যাবাদীদের সত্যবাদী মনে করা হবে
মসজিদগুলো সুসজ্জিত করা হবে, কিন্তু সেখানে আল্লাহভীতি থাকবে না
জ্ঞানহীনতা বৃদ্ধি পাবে, আলেমরা ক্রমশ কমতে থাকবে
অবৈধ সম্পদ উপার্জন ও সুদের লেনদেন বেড়ে যাবে
সন্তানরা বাবা-মার অবাধ্য হবে
নগ্ন পায়ে চরণকারী রাখালরা সুউচ্চ ভবন নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে
হত্যা ও রক্তপাত ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে
২. বড় আলামত:
কেয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশ পেলে, কেয়ামত একেবারে নিকটবর্তী হয়ে যাবে।
দাজ্জালের আবির্ভাব
ইমাম মাহদির আগমন
ইয়াজুজ-মাজুজের মুক্তি
সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে
পৃথিবী ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হবে (দুখান)
ঈসা (আ.)-এর দাজ্জালকে হত্যা করা
কাবা শরিফ ধ্বংস করা হবে
তিনটি বড় ভূমিকম্প হবে (পূর্ব, পশ্চিম ও আরব ভূখণ্ডে)
এক বিরাট আগুন বের হবে, যা মানুষকে একত্রিত করবে
কেয়ামত আমাদের কতটা সন্নিকটে?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
إِنَّ أَوَّلَ أَمْرٍ تَفْقِدُونَهُ مِنْ دِينِكُمُ الأَمَانَةُ وَآخِرُهُ الصَّلاَةُ، وَلَتُصَلُّنَّ نِسَاءُ قَوْمٍ وَهُنَّ حُيَّضٌ وَلَتُفْشُونَّ أَحْفَادَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمُدُنِ
(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬৪৫)
অর্থাৎ, ইসলামের প্রথম জিনিস যা লোপ পাবে তা হলো আমানতদারিতা, এবং সর্বশেষ জিনিস যা বিলুপ্ত হবে তা হলো নামাজ।
বর্তমানে আমরা এসব আলামতের অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি—মানুষ সত্যকে মিথ্যা বলে, মিথ্যাকে সত্য বলে, সুদ ও ঘুষ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে, পর্দাহীনতা ও ব্যভিচার বেড়ে গেছে, হত্যা-রক্তপাত সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবই কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
রমজান মাস: নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ
রমজান মাস আল্লাহর রহমতের মাস, এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই আমাদের উচিত কেয়ামতের দিন সফলতা লাভের জন্য এই মাসকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
(বুখারি, হাদিস: ১৯০১)
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
আমাদের করণীয়:
* আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করা
পাঁচওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা
* কুরআন তেলাওয়াত ও অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা
করা
* মিথ্যা, গীবত, সুদ, হারাম ও সকল গুনাহ থেকে বিরত
থাকা
* দান-সদকা ও সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করা
কেয়ামতের দিন কবে আসবে, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে আমরা যেসব আলামত দেখছি, তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কেয়ামত হলো মৃত্যু, যা যেকোনো সময় আসতে পারে। তাই এই পবিত্র রমজানে আমাদের উচিত সকল গুনাহ থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা, নিজেদের শুধরে নেওয়া, এবং পরকালীন মুক্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
اللهم اجعلنا من التائبين، واغفر لنا ذنوبنا، وارزقنا الجنة الفردوس الأعلى.
(হে আল্লাহ! আমাদেরকে তওবা করার তৌফিক দান করুন, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করুন, এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন!