আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: ইসলামে শুক্রবার অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন, আর মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার বা জুমাতুল বিদা মুসলিম উম্মাহর কাছে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধু একটি জুমা নয়, বরং পুরো রমজান মাসের ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির বিদায়ক্ষণ।
জুমাতুল বিদা এমন এক দিন, যখন মুসলমানরা গভীর আত্মজিজ্ঞাসা, ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে রমজানের শেষ জুমাকে বিদায় জানায়। এটি জীবনের শেষ রমজানও হতে পারে, তাই দিনটি আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হল শুক্রবার। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। কিয়ামতও এই শুক্রবারে সংঘটিত হবে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭)
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জুমার বিশেষ ফজিলত;
আল-কোরআনে বলা হয়েছে—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ:
"হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে সালাতের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদের দিকে) ছুটে চলো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।" (সূরা আল-জুমু’আহ: ৯)
এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, জুমার নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আর মাহে রমজানের শেষ জুমা হলে তা আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ হয়ে ওঠে।
জুমাতুল বিদার বিশেষ আমল ও ইবাদত:
জুমাতুল বিদার দিনে নিম্নলিখিত আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিত:
১. তওবা ও ইস্তেগফার: আল্লাহর কাছে অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সৎপথে থাকার প্রতিজ্ঞা করা।
২. বিশেষ দোয়া: ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য দোয়া করা।
৩. কুরআন তেলাওয়াত: আল-কোরআনের বিভিন্ন সুরা তেলাওয়াত করা, বিশেষত সুরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
৪. সাদকাহ (দান): গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান-সদকা করা, কারণ দানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাহে রমজানের শেষ শুক্রবারকে আল-কুদস দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। এটি মূলত ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মসজিদ আল-আকসার মুক্তির জন্য প্রার্থনার দিন।
সুতরাং: জুমাতুল বিদা কেবল একটি দিন নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসার বিশেষ উপলক্ষ। এ দিনটি যেন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে রমজানের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করার একটি সুযোগ হয়ে ওঠে। আসুন, আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ দিনটিকে যথাযথভাবে পালন করি এবং তাঁর নিকট ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করি।