আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল, ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করা টাইটানিক জাহাজে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে ওঠেন কর্নেল আর্চিবাল্ড গ্রেসি। তার লেখা একটি বিশেষ চিঠি সম্প্রতি ইতিহাসের মূল্যবান দলিল হিসেবে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি। তবে, কী এমন রহস্য ছিল এই চিঠিতে যা এত মূল্যবান হয়ে উঠল?
এই চিঠিটি গ্রেসি তার এক পরিচিতজনকে পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি লিখেছিলেন, “এটি একটি চমৎকার জাহাজ, কিন্তু আমি এর সম্পর্কে চূড়ান্ত মতামত দিতে চাই না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি যাত্রার শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করব।” এ মন্তব্যটি এক ধরনের সতর্কতার সংকেত ছিল, কারণ তার কথাগুলো পরবর্তীতে টাইটানিকের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।
গ্রেসি, যিনি টাইটানিকের একটি প্রথম শ্রেণির কেবিনে ছিলেন, যাত্রার সময় তার মন্তব্যের মাধ্যমে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে, তিনি অবশ্যই জানতেন না যে, এই চিঠি ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে উঠবে।
টাইটানিকের ভয়াবহ দুর্ঘটনা:
এটি ছিল ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিলের কথা, যখন টাইটানিক একটি বরফের পাহাড়ে আঘাত হানে এবং ডুবে যায়। এতে প্রায় ১,৫০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে, কর্নেল গ্রেসি সেদিন বেঁচে যান এবং একটি উল্টে যাওয়া লাইফবোটে উঠে জীবন বাঁচান। তাঁর লেখা চিঠিটি পরে টাইটানিকের দুর্ঘটনা ও তার ভয়াবহতার বাস্তবতা আরও স্পষ্ট করে।
নিলামে চিঠি বিক্রি:
এ চিঠিটি ১১ এপ্রিল ১৯১২ তারিখে আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউনে পোস্ট করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ১২ এপ্রিল লন্ডনে এর ডাক সিল মারা হয়। এই চিঠি সম্প্রতি একটি নিলামে বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ পাউন্ডে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, চিঠিটি ৬০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি প্রত্যাশিত মূল্যের পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান "হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সন" জানিয়েছে যে, এটি ছিল টাইটানিকের ভেতরে বসে লেখা প্রথম কোনো চিঠি, যা এত উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে। চিঠিটি গ্রেসির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি এবং টাইটানিক দুর্ঘটনার পূর্বাভাস প্রদান করে।
এছাড়াও, কর্নেল গ্রেসি, যিনি টাইটানিকের ভয়াবহ দুর্ঘটনার অন্যতম সুপরিচিত বর্ণনাকারী, তাঁর বই “দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট দ্য টাইটানিক”-এ পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন কীভাবে তিনি বরফশীতল পানিতে সাঁতার কাটতে কাটতে একটি লাইফবোটে উঠে প্রাণে বেঁচে যান। বইটি তখনকার সময়কার যাত্রীদের অভিজ্ঞতার অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
গ্রেসি দুর্ঘটনার পরে কয়েক মাসের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার লেখা চিঠিটি পৃথিবীর ইতিহাসে এক অমূল্য দলিল হয়ে রয়ে গেছে। এটি টাইটানিক দুর্ঘটনার এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দলিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সেকালের পরিস্থিতি, মানুষের মানসিকতা এবং টাইটানিক সম্পর্কে আশঙ্কাকে প্রতিফলিত করে।
এই চিঠি রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার অনেকেই অবাক হয়েছে, তবে এটি ইতিহাসের এক অমূল্য অংশ হয়ে রইল, যা আগামী অনেক বছর ধরে এই ঘটনার স্মৃতি জাগিয়ে রাখবে।