আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বজ্রপাত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনা, যা মানুষকে তার ভয়াবহতা দেখিয়ে কেবল বিস্মিতই করে না, বরং বিজ্ঞানের অজানা দিকগুলোও উন্মোচন করে। যদিও বজ্রপাতের আশঙ্কা প্রাচীনকাল থেকেই ছিল, আধুনিক বিজ্ঞান এখন এর পেছনে লুকানো রহস্যগুলো খুলে ধরেছে এবং কীভাবে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব তা বিশ্লেষণ করেছে।
বজ্রপাত কিভাবে ঘটে?
বজ্রপাত মূলত মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ ঘটে। মেঘের উপরের অংশ পজিটিভ চার্জে এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে থাকে। যখন মেঘে জমা হওয়া বিদ্যুৎ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন এটি মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ সৃষ্টি করে, যা বজ্রপাতের আকারে প্রকাশিত হয়। একে বলা হয় 'মেঘ-ভূমি বজ্রপাত'। তবে মাটি থেকেও মেঘের দিকে বজ্রপাত ঘটতে পারে, বিশেষত যখন অনেক উঁচু গাছ বা ভবনের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
বজ্রপাতের শব্দ: কিভাবে সৃষ্টি হয়?
বজ্রপাতের সাথে সৃষ্ট গর্জন, বা 'থান্ডার', মূলত বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট তাপ ও চাপের কারণে বাতাসের দ্রুত সম্প্রসারণের ফল। বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের ফলে বাতাসের একেবারে কাছাকাছি তীব্র তাপ সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিস্ফোরিত হয়। এই দ্রুত বিস্ফোরণ বাতাসের চাপ তৈরি করে এবং সেই চাপের তরঙ্গ হিসেবে আমাদের কাছে পৌঁছায়, যা 'থান্ডার' নামে পরিচিত।
বজ্রপাতের কিছু বিস্ময়কর তথ্য:
১. তাপমাত্রা: বজ্রপাতের তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়েও প্রায় পাঁচ গুণ বেশি, প্রায় ৩০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২. ঘটনাচক্র: প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বে প্রায় ১০০ বার বজ্রপাত ঘটে!
৩. বিশেষ স্থান: সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে আফ্রিকার কঙ্গো নদী অঞ্চলে এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলার ক্যাটাটুম্বো নদীর মোহনায়।
৪. বজ্রপাতের দিক: সাধারণত বজ্রপাত মেঘ থেকে মাটি পর্যন্ত ঘটে, তবে উঁচু ভবন বা গাছের ওপর দিয়ে মাটি থেকে মেঘের দিকে বজ্রপাত ঘটতে পারে।
৫. শক্তি: একটি বজ্রপাতের শক্তি দিয়ে প্রায় ১০০ ওয়াটের একটি বাল্ব তিন মাস পর্যন্ত জ্বালানো যেত—যদি পুরো শক্তি ব্যবহার করা যেত!
বজ্রপাতের পূর্বাভাস: কীভাবে সম্ভব?
বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিতে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে লাইটনিং ডিটেকশন সিস্টেম (LDS)। এই সিস্টেম বজ্রপাতের সঠিক অবস্থান, শক্তি এবং এর সম্ভাব্য গতি নির্ধারণ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হলো থার্মাল ইমেজিং। এটি মেঘের তাপমাত্রা এবং গঠনের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে বজ্রপাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে। এছাড়া আবহাওয়া রাডার এবং আলোচনামূলক মডেলিং বজ্রপাতের আগাম খবর দেয়।
বজ্রপাতের পূর্বাভাস এখন বিজ্ঞানীর পক্ষে সম্ভব, তবে এর কার্যকারিতা পুরোপুরি নির্ভর করে আবহাওয়ার শর্ত এবং প্রযুক্তির নির্ভুলতার ওপর।
বজ্রপাত প্রকৃতির এক ভয়ংকর সৌন্দর্য, যা আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন করে জানার এবং বুঝার সুযোগ দেয়। বজ্রপাতের সৃষ্টি থেকে এর শক্তি এবং শব্দ পর্যন্ত, সবকিছুই একটি রহস্যময় এবং শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনা, যা আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের আরও গভীরভাবে জানার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।