আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ২৯ এপ্রিল—বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীর বেদনা ও অশ্রুভেজা এক দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষ সাক্ষী হয়েছিল এক ভয়াল দুর্যোগের, যা মুহূর্তেই বদলে দিয়েছিল লাখো মানুষের জীবন।
সেদিন রাত ছিল নিরব, কিন্তু সেই নীরবতার মাঝে জমেছিল এক ভয়ংকর বিপদ। রাত প্রায় বারোটার দিকে, ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসে এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়। সাথে ছিল ২০ ফুট উচ্চতার ভয়াল জলোচ্ছ্বাস, যা মুহূর্তের মধ্যে গ্রাস করে ফেলে সমগ্র উপকূলীয় জনপদ।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উপকূলের অগণিত ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশে যায়। ধ্বংস হয় হাসপাতাল, স্কুল, রাস্তাঘাট। আশ্রয়ের অভাবে বহু মানুষ প্রাণ হারায়, পানির স্রোতে ভেসে যায় গবাদিপশু ও ফসলের মাঠ। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব বলছে, প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল আরও অগণিত। প্রায় ১ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। চারদিকে ছিল শুধু কান্না আর শোকের দৃশ্য।
এই ভয়াবহ দুর্যোগের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পর্যাপ্ত সতর্কবার্তার অভাব এবং উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ের ঘাটতি। দুর্যোগ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি ব্যবস্থায় সেই সময় বাংলাদেশের অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। ফলে যখন ঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়ে, তখন সাধারণ মানুষ আর পালানোর সুযোগ পায়নি।
১৯৯১ সালের এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকেই নয়, মানবিক বিপর্যয়ের দিক থেকেও অন্যতম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে ত্রাণ, উদ্ধার এবং পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসে সাহায্যের হাত। বাংলাদেশের মানুষের অদম্য মানসিকতা এবং ঐক্যের চেতনায় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় উপকূলীয় জনপদ।
এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ পরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করে। গড়ে তোলা হয় হাজার হাজার সাইক্লোন শেল্টার, চালু হয় পূর্বাভাস ব্যবস্থা, তৈরি হয় দুর্যোগ প্রস্তুতির নীতিমালা। আজ বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল হিসেবে দেখছে।
আজ ২৯ এপ্রিল, আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেইসব শহীদ আত্মাকে, যারা প্রকৃতির এই ভয়াল থাবায় চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিলেন। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দুর্যোগ প্রতিরোধের প্রস্তুতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং মানুষের জীবনীশক্তি কতটা অদম্য।