আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজার রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া প্যারামেডিক আসআদ আল-নাসাসরা দীর্ঘ ৩৭ দিন পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (PRCS) জানায়, মঙ্গলবার গাজার কেন্দ্রীয় কিসুফিম চেকপয়েন্ট দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
গত ২৩ মার্চ রাফাহর তেল আল-সুলতান এলাকায় একটি জরুরি উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন আল-নাসাসরা। সহকর্মীদের সঙ্গে আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মুহূর্তেই প্রাণ হারান ১৫ জন প্রথম সারির উদ্ধারকর্মী। নিখোঁজ হন আসআদ। পরে জানা যায়, তাঁকে বেঁধে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা।
এক সপ্তাহ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা দেখতে পান—বুলডোজার দিয়ে পুঁতে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ নিহতদের মরদেহ। এ যেন মানবতার বিরুদ্ধে এক নগ্ন হিংস্রতা!
মুক্তির পর PRCS একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে চোখ ভেজা আল-নাসাসরাকে সহকর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখা যায়। লাল ইউনিফর্মে জড়ানো এই দৃশ্য হাজারো চোখে জল এনেছে।
আসআদের ছেলে মোহাম্মদ জানান, হামলার আগের রাতেই বাবা ফোনে বলেছিলেন, সহকর্মীদের সঙ্গে ইফতার করতে যাচ্ছেন। এরপর আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। বাবা অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন—"মিশনে গেলে হয়তো আর ফিরবো না।" পরিবার সেই ভয়টা ভুলে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা কতটা নির্মম—তা টের পেয়েছিল পরদিন ভোরেই।
আসআদের এক সহকর্মী বলেন, তিনি শিশুদের চকলেট দিয়ে হাসাতেন। বলতেন, “রাস্তায় নয়, খেলো নিরাপদ জায়গায়।” এই মানুষটা শুধু একজন প্যারামেডিক নন, ছিলেন আশার প্রতীক।
এই হত্যাকাণ্ডে PRCS-এর ৮ জন, সিভিল ডিফেন্সের ৬ জন এবং একজন জাতিসংঘকর্মী নিহত হন। ঘটনার ভিডিও ও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহতরা পরিধান করেছিলেন প্রতিফলকযুক্ত পোশাক এবং ছিল চিহ্নিত অ্যাম্বুলেন্সে। এরপরও হামলা চালানো হয় সরাসরি।
ইসরায়েলি বাহিনী ঘটনার তদন্তে ‘কিছু পেশাগত ত্রুটি’র কথা স্বীকার করলেও, এটিকে যুদ্ধাপরাধ মানেনি। মাত্র একজন সেনাকে বরখাস্ত করেই দায় সারার চেষ্টা চলছে। PRCS এ তদন্তকে প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।
ফিরে আসা আল-নাসাসরা ও তার সহকর্মীদের দেইর আল-বালাহর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বন্দি অবস্থায় তাঁদের ওপর চালানো হয় নৃশংস শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লক্ষেরও বেশি।