আওয়ার টাইমস নিউজ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার ঠিক ছয় দিনের মাথায় আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনন্দ প্রকাশ। এই বৈঠক নিছক সৌজন্য নয়, বরং একে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন ভারতের বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
বলা হচ্ছে, একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি, অন্যদিকে আফগানিস্তানকে পাশে টেনে ‘টু ফ্রন্ট ওয়ার’ বা দ্বিমুখী চাপ তৈরির কৌশল নিচ্ছে। তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের এই ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
বৈঠকে তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও আগের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলো আবার চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তালেবান পক্ষ ভারতীয় ভিসা সহজীকরণে অনুরোধও জানিয়েছে।
তবে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ এত সরল নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত ‘ডুরান্ড লাইন’ নিয়ে দু’দেশের টানাপোড়েন বহু পুরনো। কাবুল এই সীমান্তকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে চায় না, যা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে চাইছে ভারত—এমনটাই অনেকের ধারণা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে সক্রিয় ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ (টিটিপি) গোষ্ঠী ইতোমধ্যেই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাকিস্তান অভিযোগ করে, এই গোষ্ঠীকে আফগান তালেবানরা প্রশ্রয় দিচ্ছে। যদিও তালেবান সরকার তা অস্বীকার করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি আফগান সীমান্তে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে পাকিস্তান সেনা মোতায়েনে বাধ্য হবে। তখন কাশ্মীরে ভারত সহজেই হামলার সুযোগ পাবে। এটিই হতে পারে ভারতের আসল কৌশল।
তালেবান সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়ালেও, টিটিপিকে সামনে রেখে অপ্রত্যক্ষভাবে বড় ধাক্কা দিতে পারে। কারণ আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে টিটিপির ঘাঁটি রয়েছে, যেখান থেকে তারা গেরিলা কায়দায় পাকিস্তানে আঘাত হানতে সক্ষম।
শেষ কথা: ভারত-আফগানিস্তান ঘনিষ্ঠতা যতই ‘উন্নয়নমূলক বৈঠক’ বলে প্রচার করা হোক, বাস্তবের কূটনৈতিক খেলায় এটি পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে ভারতের নতুন চাল—এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।