আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিশেষত অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীর জন্য সমান অধিকার, উত্তরাধিকার আইনে নারীদের সম্পদের অর্ধেক নিশ্চিত করা এবং শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ নিয়ে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কড়া আপত্তি উঠেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১৯ এপ্রিল কমিশন এ প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে উল্লেখ রয়েছে, মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান—সব ধর্মের পারিবারিক আইন সংস্কার করে একটি অভিন্ন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বিবাহ, তালাক ও ভরণপোষণে সব নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে আইনটি ঐচ্ছিক রাখার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
অপরদিকে উত্তরাধিকার আইনের সংস্কারের মাধ্যমে নারীদের সম্পত্তিতে ৫০ শতাংশ অধিকার এবং যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তারা আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। একই দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও।
তবে কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক জানিয়েছেন, তারা জানেন এই সুপারিশগুলো নিয়ে বাধা আসবে, কিন্তু বৈষম্য দূর করার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে পারবে।
প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করে ৬০০ করার সুপারিশও করা হয়েছে, যেখানে প্রতি নির্বাচনি এলাকায় একটি করে সাধারণ ও একটি নারী সংরক্ষিত আসন থাকবে—দুইটিতেই সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। এ ছাড়া, রাজনৈতিক দলে ৩৩% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সব খাতে প্রসূতি ও পিতৃত্বজনিত ছুটি, গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি, এবং একটি স্থায়ী নারী কমিশন গঠনের মতো ১৫টি বিষয়ে ৪২৩টি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাজবিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সমাজে বড় পরিবর্তন সহজে গৃহীত হয় না। পর্যায়ক্রমে সংস্কার আনলে তা মেনে নেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। রিপোর্টে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তা দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।