
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশি তরুণদের স্বপ্নের গন্তব্য এখন আর শুধু সরকারি চাকরি নয়, বিশ্বজয় করাও তাদের লক্ষ্য। তারই উজ্জ্বল প্রমাণ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী মো. ইরফান উদ্দীনের জীবনের গল্প। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিকেন্দ্র সিলিকন ভ্যালির এআই কোম্পানি Astera Labs-এ পেশাগত যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি।
বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি বেতন এবং ৩০ লাখ টাকার সাইনিং বোনাস, সঙ্গে আরও নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইরফান আগামী ৩০ জুন কোম্পানিটিতে যোগ দিচ্ছেন ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে।
কঠিন প্রতিযোগিতার পর সফলতা
ইরফান জানান, এই পদের জন্য তাকে মোট ৯ ধাপে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ধাপে টানা ৫ ঘণ্টার অনসাইট টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ ছিল, যা তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এ ইন্টারভিউয়ের জন্য তাকে ওয়াইয়োমিং থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমাতে হয়েছে। তার ভাষায়, “এই ধরনের ইন্টারভিউয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। ধৈর্য, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।”
এক হাজারের বেশি আবেদন, কিন্তু হাল ছাড়েননি
২০২৫ সালের মে মাসে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইয়োমিং থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেন ইরফান। কিন্তু তিনি জানুয়ারি থেকেই চাকরির জন্য আবেদন করা শুরু করেন। প্রথম দিকে সাড়া না পেয়ে হতাশ হলেও থেমে থাকেননি।
“প্রতিদিন ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণার পর দুই ঘণ্টা চাকরির জন্য সময় রাখতাম। মে মাসের মাঝামাঝি প্রথম অফার পাই টেক্সাসের একটি কোম্পানি থেকে। একই দিনে ফক্সকন ও Astera Labs-এর কাছ থেকেও অফার পাই। এর মধ্যে Astera ছিল আমার স্বপ্নের মতো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এক হাজারেরও বেশি জব অ্যাপ্লিকেশন করেছি। যেটিতে চাকরি পেলাম, সেটিই ছিল আমার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কোম্পানি।”
কম সিজিপিএ, তারপরও ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ
চুয়েট থেকে স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল মাত্র ২.৯৮। অনেকের ধারণা, কম সিজিপিএ হলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ইরফান সেটিকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমার কোনো গবেষণাপত্র ছিল না। তখনই বুঝি যে, GRE-তে ভালো করতে হবে। আমি সিরিয়াসলি প্রস্তুতি নিই এবং ৩৩১ স্কোর করি। এই স্কোর এবং ভালো স্টেটমেন্ট অফ পারপাসই আমাকে ফুল ফান্ডিং এনে দেয়।”
বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা সাহায্য করেছে
ইরফান বাংলাদেশে চাকরির খোঁজে শুরুতে বেশ কিছুদিন বেকার ছিলেন। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং সর্বশেষ ওয়ালটন-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
“অনেকেই ভাবেন দেশের কাজের অভিজ্ঞতা বিদেশে মূল্যায়িত হয় না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।”
গ্রামের স্কুল থেকে সিলিকন ভ্যালি
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে ইরফানের জন্ম। স্থানীয় ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৫.০০ পান। পরে চুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
পরিশেষে একটি স্বপ্নপূরণ
ইরফান বলেন, “আমি কখনোই ভাবিনি এই বেতন পাবো। তবে ধৈর্য, চেষ্টা আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে সব সম্ভব। সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করা ছিল আমার স্বপ্ন, আর আজ তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।”
টাইমস নিউজের পক্ষ থেকে মো. ইরফান উদ্দীনকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা। তার এই গল্প বাংলাদেশের লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।