
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক। তিনি বলেন, এই সরকারের নেতৃত্বে ন্যূনতম পরিবর্তনের আশাও পূরণ হয়নি। নির্বাচন ব্যবস্থায় সন্ত্রাস, কালোটাকা, পেশিশক্তি ও দুর্বৃত্তায়নের আধিপত্য রোধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে করে গণমানুষের প্রত্যাশা ভেঙে পড়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ খেলাফত শ্রমিক মজলিস আয়োজিত জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মামুনুল হক বলেন, ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশের প্রকৃত সংকট ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে কোনো পরিষ্কার বার্তা ছিল না। কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের কোনো ছাপ সেখানে পাওয়া যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেমন ব্যর্থ, তেমনি এই ব্যর্থতায় বিএনপিরও বড় ভূমিকা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সকল বিপ্লবে শ্রমিক-জনতার অবদান অপরিসীম। চব্বিশের বিপ্লবের রাজপথে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিলেও শ্রমিকরা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি এবং জাতীয় ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের দ্বিমতের কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এমন উচ্চকক্ষ চাই না যা কেবল বেকার পুনর্বাসনের কেন্দ্র হবে।” বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনারা যদি অর্থবহ উচ্চকক্ষ গঠনে ব্যর্থ হন এবং এমপি বাড়িয়ে রাষ্ট্রের বোঝা বাড়ান, তবে তা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।”
ফ্যাসিবাদের বিচার নিয়ে তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী কিছু মামলা করলেও আজ পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। বরং ফ্যাসিবাদের সময় নির্যাতিতরাই আজ মামলার আসামি। শাপলা চত্বরের ঘটনায় আমরাই এখনো মামলাভুক্ত। এই ধরনের বেআইনি শাসন আমরা মেনে নেব না।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মামুনুল হক বলেন, “ঘোষণাপত্রে বঙ্গভঙ্গ, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর এবং ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কোনো উল্লেখ নেই। অথচ এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের মৌলিক অংশ। এগুলোর স্বীকৃতি ছাড়া ঘোষণাপত্র পূর্ণতা পাবে না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনি যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন জনগণের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি ছাড়া আপনার মুক্তির কোনো উপায় নেই। শাপলার রক্ত, বিডিআর হত্যাকাণ্ড এবং জাতীয় ষড়যন্ত্রকে ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করে আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত শ্রমিক মজলিসের আহ্বায়ক মুফতি শরাফত হোসাইন। উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব মাওলানা আবু সাঈদ নোমান ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান হেলাল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ, রেজাউল করীম জালালী, শাহিনুর পাশা চৌধুরী, জালাল উদ্দীন আহমদ, আতাউল্লাহ আমীন, তফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, এনামুল হক মুসা, মাহদি হাসান, হারুনুর রশীদ ভূইয়া, সানাউল্লাহ আমীনি, মুহাম্মদ ফয়সাল, আবুল হাসনাত জালালী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুর রহমান, জাহিদুজ্জামান, আতিকুর রহমান, মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিকী, শরিফুজ্জামান জসিম প্রমুখ।




























