
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা সিটির উপর আবারো ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই তারা ১৫ তলা ‘সুসসি টাওয়ার’ গুঁড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর ভবনের সন্নিকটে অবস্থিত এই বহুতল মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইসরাইলি সেনারা বাসিন্দাদের মাত্র আধা থেকে এক ঘণ্টার সময় দেয়, যা এতো বড় ভবন খালি করার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। এতে মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়।
ইসরাইলি সেনারা দাবি করছে, এসব ভবন হামাসের গোয়েন্দা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি আসলে বেসামরিক মানুষকে উচ্ছেদ করার কৌশল। তাদের মতে, এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র তামারা আলরিফাই বলেন, এই হামলাগুলো শুধুমাত্র ভবন নয়, পুরো পরিবার ও প্রজন্মকেই নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজা সিটি থেকে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, আর এদের অর্ধেকই শিশু। মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম বলেন, “প্রতিটি দ্বিতীয় মানুষ এখানে শিশু, আর তাদের জন্য জীবন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।”
সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্যমতে, গত ২৩ মাস ধরে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন শিশু নিহত হচ্ছে। গাজার সরকারি হিসেব অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালের পর থেকে নতুন করে ইসরাইলি হামলায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জন গাজা সিটির বাসিন্দা। পাশাপাশি দুর্ভিক্ষে মারা গেছে আরও ৬ জন। দুই বছরের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮২ জনে, যার মধ্যে ১৩৫ শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৩৬৮ এবং আহতের সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৩৬৭ জন।
নিরাপদ অঞ্চলও আর নিরাপদ নয়:
গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত দুইজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে। অথচ এই এলাকাকেই যুদ্ধের শুরুতে “মানবিক নিরাপদ জোন” হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরাইল।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব নিরাপদ এলাকা আসলে জনগণকে জোর করে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বাস্তবে এসব স্থান বহুবার বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফিরে যাওয়ার মতো কিছুই নেই
এদিকে , গাঁজা সিটির জেইতুন এলাকায় যারা ফিরে গেছেন, তারা দেখেছেন চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ। বাসিন্দা আকিল কিশকো বলেন, “৫০ বছরে যা গড়েছিলাম, মাত্র ৫ দিনে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা শুধু ধ্বংসস্তূপে হাঁটছি না, হাঁটছি আমাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহের ওপর।
অন্য এক বাসিন্দা নোহা তাফিশ বলেন, গাজা সিটির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, মানুষ কীসের কাছে ফিরবে?
আরেকজন, আহমেদ রিহেম বলেন, “এ যেন পুরো জেইতুন এলাকায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে।”
সূত্র: আল জাজিরা




























