
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী জীবন ডেস্ক: সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো পবিত্র জুমার দিন। এই দিনটি শুধু মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদই নয়, বরং এমন একটি দিন যা আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ। জুমার দিনে যে আমলগুলো করার জন্য কুরআন ও হাদীসে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত।
জুমার দিনের সূরা কাহাফ পাঠের ফজিলত নিয়ে বহু সহীহ হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত নূর বিস্তার করা হবে।” (সহীহ আল-জামে: ৬৪৭০) অর্থাৎ, এই সূরা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার অন্তরকে নূরে ভরিয়ে দেন এবং তার জীবনকে আলোয় আলোকিত করেন।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (সহীহ মুসলিম: ৮০৯) আবার অন্য বর্ণনায় এসেছে, শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করলেও একই ফজিলত লাভ করা যায়। দাজ্জাল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিতনা, তাই সূরা কাহাফ মুমিনের জন্য একটি আত্মিক ঢালস্বরূপ।
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলেন, সূরা কাহাফের ভেতরে এমন চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি রয়েছে, যা মুসলমানদের জীবনের বড় বড় পরীক্ষার শিক্ষা দেয়। প্রথমত, গুহার যুবকদের কাহিনি থেকে বোঝা যায় ঈমানের জন্য ত্যাগ ও আকীদার দৃঢ়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, দুই বাগানের মালিকের গল্প থেকে শেখা যায় সম্পদের পরীক্ষায় কিভাবে বিনয়ী থাকা উচিত এবং অহংকারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। তৃতীয়ত, মূসা আলাইহিস সালাম ও খিজির আলাইহিস সালামের ঘটনা থেকে বোঝা যায় মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং আল্লাহর হিকমতকে মান্য করার গুরুত্ব। আর চতুর্থত, যুলকারনাইনের ঘটনা থেকে শেখা যায় ক্ষমতা ও নেতৃত্বের সঠিক ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত।
এই চারটি ঘটনা আসলে মুসলমানকে চারটি বড় ফিতনা থেকে রক্ষা করার শিক্ষা দেয়- আকীদার পরীক্ষা, সম্পদের পরীক্ষা, জ্ঞানের পরীক্ষা এবং ক্ষমতার পরীক্ষা। বর্তমান যুগে দুনিয়ার ফিতনা যেমন ক্রমশ বাড়ছে, সূরা কাহাফের শিক্ষা মুসলমানদের জন্য ততই জরুরি হয়ে উঠেছে।
উলামায়ে কেরাম বলেন, জুমার দিন সূর্যোদয় থেকে মাগরিব পর্যন্ত যেকোনো সময় সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা যায়। তবে যারা ফজরের পর পড়েন, তারা দিনটির শুরুতেই নূরের আলোয় নিজেদের অন্তরকে ভরিয়ে নেন। কেবল আরবিতে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে অর্থ ও তাফসীরসহ বুঝে পড়া হলে এর শিক্ষা জীবনে বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়া একজন মুসলিমকে শুধু দাজ্জালের ফিতনা থেকে নয়, বরং দুনিয়ার নানা ধরণের বিভ্রান্তি, অহংকার, অবিচার ও ভ্রান্ত পথ থেকে দূরে রাখে। এটি মুমিনের অন্তরে ঈমানকে দৃঢ় করে এবং ন্যায় ও সত্যের পথে অটল থাকতে সহায়তা করে।
জুমার দিন আল্লাহর রহমতে ভরপুর একটি দিন। এদিনে মুমিনগণকে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। তাই এদিনে কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ, দোয়া ও জিকিরের পাশাপাশি সূরা কাহাফ পাঠ করাও একটি মহৎ আমল।
মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান-জুমার দিনের এই বরকতময় আমলকে অবহেলা না করে নিয়মিত পালন করুন। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত, বরকত ও হিফাজত লাভ করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে ঈমানকে দৃঢ় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।































