
আওয়ার টাইমস নিউজ।
গাজা থেকে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার জন্য ৩১ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি যুবক মুহাম্মদ আবু দাখারের যাত্রা একেবারে অভাবনীয়। এক বছরেরও বেশি সময়, হাজার হাজার ডলার খরচ, উদ্ভাবনী কৌশল এবং সাহসের মিশ্রণে আবু নৌকা না ব্যবহার করে জেট স্কিতে সমুদ্র পার হন, প্রতিটি মুহূর্ত নিজেই রেকর্ড করেন।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল-হামাস সংঘাতের কারণে গাজা এবং পশ্চিম তীরে মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতের ফলে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
আবু জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পাঁচ হাজার ডলারের বিনিময়ে তিনি রাফা সীমান্ত পার হন। প্রথমে চীনে আশ্রয় নেওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় তিনি লিবিয়ার দিকে যান। লিবিয়ায় শরণার্থীদের প্রতি নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও আবু সেখানে থেকে ইউরোপমুখী যাত্রার পরিকল্পনা করেন।
অভিনবভাবে, জেট স্কিতে সফর করার পরিকল্পনা করেন আবু। পাঁচ হাজার ডলার দিয়ে একটি ইয়ামাহা জেট স্কি কেনেন, সঙ্গে নেন জিপিএস, স্যাটেলাইট ফোন ও লাইফ জ্যাকেট—আরও ১৫০০ ডলার দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। নিজের দুই ফিলিস্তিনি সঙ্গী (২৭ বছর বয়সী একজন এবং ২৩ বছর বয়সী বাসেম) সঙ্গে নিয়ে তারা সমুদ্রের পথে নেমে পড়েন। জেট স্কির সঙ্গে একটি ছোট ডিঙি বেঁধে রাখা হয়, যাতে খাবার ও পানি থাকে।
চ্যালেঞ্জ ছিল বিশাল। ১২ ঘণ্টা টানা সমুদ্রের বুকে জেট স্কি চালানোর পরও, লাম্পেডুসা দ্বীপের ২০ কিলোমিটার আগে তাদের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। এসময় তারা চ্যাটজিপি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানির হিসাব করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ আগস্ট রোমানিয়ার টহল নৌকা তাদের উদ্ধার করে, যা ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থার পক্ষ থেকে “অভাবনীয়” হিসেবে বর্ণিত হয়।
কিছুদিন লাম্পেডুসা শরণার্থী শিবিরে থাকার পরে আবু সিসিলি, জেনোয়া ও ব্রাসেলস হয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছান। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে একটি শরণার্থী শিবিরে থাকছেন এবং দেশের সরকারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।
মুহাম্মদ আবুর এই যাত্রা শুধু সাহসিকতার গল্প নয়, গাজার কঠিন মানবিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপনের প্রচেষ্টা ও উদ্ভাবনী দক্ষতারও প্রতীক।