
সম্পাদকীয় কলাম: হুসাইন আল আজাদ।
আওয়ার টাইমস নিউজ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবল শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি সময়, একটি দর্শন এবং একটি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। তাঁর জীবন ও নেতৃত্ব আমাদের শেখায়, ক্ষমতা নয় নীতি ও দৃঢ়তাই একজন নেতাকে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী সম্মানিত করে।
একটি সাধারণ পারিবারিক জীবন থেকে উঠে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দায়িত্ব গ্রহণের এই মহা পথচলা বেগম জিয়ার জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্ব জন্মসূত্রে নয়, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন; আবার ক্ষমতার বাইরে থেকেও ছিলেন রাজনীতির কেন্দ্রে—জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে এক অবিচল কণ্ঠস্বর।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক ছিল আপসহীনতা। যে জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে বেশি তার প্রতি মন্ত্রমুগ্ধ করেছে, তার এই অবিচল আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে, আমি গত ২০ বছরে বহু পত্রিকার পাতা পড়েছি, কখনো তিনি এমন কোন কথা উচ্চারণ করেননি, যা নিয়ে দেশের মানুষ সমালোচনা করেছেন, তুমি কথা বলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট শালীন ছিলেন, শব্দ চয়নে যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন, এজন্যই তিনি আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় মানুষ ছিলেন।
তিনি দীর্ঘদিন নিপীড়ন-কারাবাস ও শারীরিক ভোগান্তির মধ্যে থেকেও কখনো নিজের স্বার্থে অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। তিনি কখনোই নিজের কষ্টকে সামনে এনে দেশের প্রশ্নে নরম হননি। ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট ও অনড় অবিচল।
নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এক শক্তিশালী দৃষ্টান্ত। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব যখন ব্যতিক্রম, তখন তিনি সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি বড় রাজনৈতিক দল ও একটি রাষ্ট্রকে। তাঁর উপস্থিতি নারী সমাজের জন্য শুধু অনুপ্রেরণা নয়, আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
দীর্ঘ অসুস্থতা, চিকিৎসা-সংকট এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর মনোবল ভেঙে পড়েনি। নীরব সহনশীলতাই ছিল তাঁর শেষ জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা। এই নীরবতা ছিল পরাজয়ের নয়, বরং দৃঢ় আত্মমর্যাদার প্রকাশ।
আজ বেগম খালেদা জিয়া নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন এমন এক উত্তরাধিকার, যা কেবল একটি দলের নয়—সমগ্র জাতির রাজনৈতিক বিবেককে প্রশ্ন করতে শেখায়। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে একজন এমন নেত্রী হিসেবে, যিনি ক্ষমতার চেয়ে আদর্শকে বড় করে দেখেছিলেন।
বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ককে হারিয়েছে। কিন্তু তাঁর সংগ্রাম, দৃঢ়তা ও নেতৃত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রয়ে যাবে পথনির্দেশক আলো হিসেবে।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর সমস্ত গুনাহসমূহ মার্জনা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন আমিন।



























