
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: রমজান শুধু উপবাসের মাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির, সংযমের ও আল্লাহর রহমত লাভের এক বিশেষ সুযোগ। তাই শুধু বাহ্যিক প্রস্তুতি নিলেই হবে না, বরং মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতিও জরুরি। এই প্রস্তুতি আমাদের ইবাদতকে আরও গভীর ও অর্থবহ করে তুলবে। আসুন জেনে নেই রমজানের জন্য মানসিক প্রস্তুতির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
১. তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি
রমজানের আগেই আমাদের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আন্তরিক তওবা করা উচিত। বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে পাপ না করার প্রতিজ্ঞা করুন। পবিত্র মন ও হৃদয় নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানান।
২. রমজানের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
রমজানের গুরুত্ব, ফজিলত, তারাবিহ, লাইলাতুল কদর, সিয়ামের বিধান ও দোয়ার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। কোরআন ও হাদিস থেকে এই বিষয়ে পড়ুন এবং সেগুলো আমল করার চেষ্টা করুন।
৩. নিয়ত বিশুদ্ধ করা
রমজানের প্রতিটি কাজ যেন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। রোজা, ইবাদত, দান-সদকা—সব কিছু যেন লোক দেখানোর জন্য না হয়, বরং একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়।
৪. ইবাদতের পরিকল্পনা করা
রমজান এলে যেন সময় নষ্ট না হয়, তার জন্য আগে থেকেই ইবাদতের পরিকল্পনা করুন। প্রতিদিন কতটুকু কোরআন পড়বেন, কত রাকাত নফল নামাজ পড়বেন, কখন দোয়া করবেন—এসবের একটি রুটিন তৈরি করুন।
৫. ধৈর্য ও সংযম চর্চা
রমজান শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার মাস নয়, বরং এটি আমাদের ধৈর্য ও সংযম শেখায়। এখন থেকেই রাগ, হতাশা ও নেতিবাচক মনোভাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন, যাতে রমজানে এগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
৬. দান-সদকার মানসিকতা গড়ে তোলা
রমজান দান-খয়রাতের মাস। এখন থেকেই দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি উদার হওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন। প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে রমজানে তা আরও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৭. খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা
মিথ্যা বলা, গীবত করা, সময় অপচয় করা, অহেতুক সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকা—এ ধরনের খারাপ অভ্যাস এখন থেকেই ছাড়ার চেষ্টা করুন। এতে রমজানের বরকত পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।
৮. পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া
রমজানে শুধু নিজের ইবাদত করাই যথেষ্ট নয়, বরং পরিবার ও আশপাশের মানুষদেরও ইসলামের পথে উৎসাহিত করুন। পরিবারের সঙ্গে ইবাদত করুন, ছোটদের রোজার গুরুত্ব শেখান, প্রয়োজনে অসহায়দের সাহায্য করুন।
৯. কৃতজ্ঞতার অনুভূতি বৃদ্ধি করা
রমজান আমাদের আল্লাহর নিয়ামতগুলোর মূল্য বোঝায়। প্রতিদিন আমাদের যা আছে, তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন। খাবার, পানি, স্বাস্থ্য—সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হোন এবং তা ভালো কাজে ব্যবহার করুন।
১০. রমজানের সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা
রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। এখন থেকেই সময় ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কম প্রয়োজনীয় কাজ কমিয়ে দিন, বিনোদন ও সময় অপচয়ের জায়গাগুলো নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো এড়িয়ে চলার পরিকল্পনা করুন।
রমজান শুধু একটি মাস নয়, এটি আমাদের জন্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাই শুধু বাহ্যিক প্রস্তুতি নিলেই হবে না, বরং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আত্মাকে পবিত্র করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এই ১০টি ধাপ অনুসরণ করলে রমজান হবে আরও অর্থবহ, বরকতময় এবং আমাদের জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।