
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের ভয়ঙ্কর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের নির্মম চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে, তারা গাজায় ঢুকে চোখে যা পেয়েছেন, তাকেই গুলি করেছেন। নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কেউই রেহাই পায়নি। এমনকি গৃহপালিত প্রাণীও এই নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে।
এক সেনা বলেন, “আমরা প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম, কিন্তু এখানে এসে দেখি শুধু হামাস নয়, তাদের স্ত্রী, সন্তান, কুকুর-বিড়াল—সব কিছুই মেরে ফেলছি। তারা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী বাফার জোন এলাকায় ৫০০ মিটারের মধ্যে কাউকে দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়। এতে বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান, যারা জানতেও পারত না তারা কোন এলাকায় প্রবেশ করছে।
যুদ্ধের শুরুতে গাজার সীমান্তবর্তী এক কিলোমিটার এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে একটি করিডোর দখল করে ইসরায়েল। এই করিডোর গাজার উত্তরের শহরগুলোকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর সেনারা ধ্বংস করে দেয় ফসলের মাঠ, সেচব্যবস্থা, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ সবকিছু।
গাজার স্থানীয় কৃষক নিদাল আলজানিন জানান, “এই ঘর বানাতে আমার ২০ বছর লেগেছে। মাত্র ৫ মিনিটে তারা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার ঘর নয়, আমার স্বপ্নও তারা মুছে দিয়েছে।” যুদ্ধবিরতির সময় তিনি ফিরে পেয়েছেন শুধু স্ত্রীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি, ছেলের মুখ আঁকা একটি প্লেট আর একটি পুরনো ডুমুর গাছ—বাকি সব ধ্বংস।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নিয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়া, গাজার প্রায় ৬ লাখ শিশু পোলিও টিকার অভাবে স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
সর্বশেষ ১৮ মার্চ, সেহেরির সময় ইসরায়েল ফের নতুন করে হামলা চালায়। এতে নিহত হন আরও ১ হাজার ৩৩৫ জন এবং আহত হন ৩ হাজার ২৯৭ জন ফিলিস্তিনি।
গাজার মানুষ এখন ঘরহীন, স্বজনহীন, আশ্রয়হীন। ধ্বংসস্তূপের ওপর তাঁবু খাটিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা। তাদের চারপাশে এখন শুধু ধ্বংস, কান্না আর মৃত্যু।