
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী জীবন ডেস্ক: বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ নীরব ধ্বংসের অস্ত্র হলো-চোখের গুনাহ। মোবাইল, ইন্টারনেট, ও সোশ্যাল মিডিয়ার অশ্লীলতার আগ্রাসন আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোটি তরুণ রাতভর হারাম দৃশ্যের নেশায় ডুবে যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে মোবাইলের নীল আলোয় যখন চোখ স্থির থাকে হারাম ছবির ওপর, তখন তাদের বিবেক নিঃশেষ হয়ে যায়, হৃদয় হারিয়ে ফেলে আল্লাহভীতি, আর মনুষ্যত্ব রূপ নেয় হিংস্রতায়।
আজকের মুসলিম যুবসমাজকে ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা বিশ্ব এক ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মরণ ফাঁদে ফেলেছে।
প্রথমে তাদের চোখ হারামের আসক্তিতে ডুবিয়েছে,
তারপর সেই পাপের অপরাধবোধে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে,
আর শেষে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে মাদক, নেশা ও আত্মধ্বংসের পথ। যে সমাজে চোখ সংযত থাকে না, সে সমাজে ব্যভিচার, ধর্ষণ, হত্যা ও নৈতিক পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
চোখের গুনাহ্ হলো ব্যভিচারের মূল সূচনা।
এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের সতর্ক করে বলেন,
﴿قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ﴾
“মুমিনদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।” (সূরা আন-নূর: ৩০)
এ আয়াতে আল্লাহ দৃষ্টিকে সংযত করার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ ব্যভিচারের আগুন প্রথম জ্বলে চোখ থেকেই। একবার হারামের দিকে তাকানো, সেটি মনকে দূষিত করে; মন থেকে তা নামে অন্তরে, আর অন্তর যখন কলুষিত হয়, তখন পা টানে গুনাহর পথে।
হাদিস শরিফে নবী করিম ﷺ বলেন: «زِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ»
“চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো।” (সহিহ বুখারি ৬২৪৩, সহিহ মুসলিম ২৬৫৭)
অর্থাৎ, চোখের মাধ্যমে যে অশ্লীল দৃশ্য দেখা হয়, তা নিজেই ব্যভিচারের একটি অংশ। এ ব্যভিচার যদিও দেহে নয়, তবে আত্মায় এমন গভীর দাগ ফেলে যা মানুষকে ধীরে ধীরে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
হারাম দৃষ্টির অজানা প্রতিফল হলো দুনিয়ার মধ্যেই ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করা।
আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে অশ্লীল কনটেন্ট বা হারাম দৃশ্যে আসক্ত থাকে, তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে দেখা দেয়: মস্তিষ্কে স্নায়ুবিক বিকৃতি, অনিদ্রা ও মানসিক বিকার, মেমোরি লস ও বিষণ্ণতা, এমনকি মরণব্যাধি নিউরোলজিকাল ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, অশ্লীলতা আসক্তি ঠিক মাদকের মতোই মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। কেউ চোখের গুনাহ থেকে না ফিরলে, সে একসময় নিজের বিবেক, নৈতিকতা, এমনকি জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
আত্মিক মৃত্যু: যখন হৃদয় হারাম দৃশ্যের বন্দী হয়
রাসূল ﷺ হজরত আলি (রা.)-কে বলেছিলেন,
“হে আলি! প্রথম দৃষ্টি মাফ, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার নয়।” (আবু দাউদ: ২১৪৯)
অর্থাৎ, হঠাৎ কিছু দেখা মাফযোগ্য, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তাকানোই হলো পাপের শুরু। যখন কেউ হারাম দৃশ্যের দিকে দ্বিতীয়বার তাকায়, তখন সেই চোখের আলো হারাম হয়ে যায়, নামাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, কুরআন পড়তে ভালো লাগে না, এবং হৃদয়ে অন্ধকার নেমে আসে। এটাই দুনিয়ার শাস্তি যখন মানুষ দেখে, তার চোখে আনন্দ, কিন্তু অন্তরে অশান্তি। তখন রাত নির্ঘুম কাটে, মন অস্থির থাকে, আর ধীরে ধীরে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।
পশ্চিমা ফাঁদে বন্দী তরুণ সমাজ পশ্চিমা বিশ্ব জানে, তরুণদের ধ্বংস করতে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই,
তাদের চোখ ও হৃদয় দখল করলেই যথেষ্ট। তাই তারা কোটি কোটি ডলারের পর্ন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ভরে দিয়েছে অশ্লীলতায়। উদ্দেশ্য একটাই যেন মুসলিম তরুণরা নামাজের কাতারে না দাঁড়ায়, বরং মোবাইল স্ক্রিনে হারাম দৃশ্য দেখে নিজেই নিজের আত্মা ধ্বংস করে ফেলে।
এ যেন অদৃশ্য দখল – শরীর নয়, মস্তিষ্ক ও আত্মাকে বন্দী করা!
চোখ হেফাজতের সুফল
১. ইমান মজবুত হয় ও অন্তর পবিত্র থাকে।
২. নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
৩. হারাম চিন্তা থেকে মুক্তি মেলে।
৪. ব্যভিচার ও বড় গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
৫. আল্লাহর নূর হৃদয়ে প্রবেশ করে।
শেষ কথা হলো, চোখের গুনাহ কেবল একটি দৃষ্টি নয়, এটি এক ভয়ংকর আগুন, যা আল্লাহভীতি, লজ্জা ও মানবিকতা পুড়িয়ে দেয়।
যে চোখ হারাম দেখে, সেই চোখ কিয়ামতের দিন আগুনে সাক্ষ্য দেবে। আজই ফিরে আসতে হবে তাওবার পথে, কারণ কাল হয়তো সেই চোখ আর দেখবে না। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই কানের, চোখের ও অন্তরের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে।” (সূরা ইসরাঃ ৩৬)
সুতরাং এখনই সতর্ক হও। হারাম দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও, চোখকে সিজদার যোগ্য করে তোল কারণ চোখ বাঁচলে, হৃদয় বাঁচবে; আর হৃদয় বাঁচলে, পুরো জাতি বেঁচে যাবে।
মহান আল্লাহ্ আপনাদের সবাইকে চোখের যাবতীয় সমস্ত গুনাহ্ থেকে হিফাজত করুন আমীন।





























