
আওয়ার টাইমস নিউজ।
বিশেষ সম্পাদকীয় প্রতিবেদনঃ
হুসাইন আল আজাদ ইবনে নোয়াব আলী।
জুবলাই বিপ্লব ডেস্ক: একটা রাজনীতি, একটা ক্ষমতা, আর একদল হিংস্র লেলিয়ে দেয়া পুলিশ, এই তিনের নিষ্ঠুর মিলনই ৫ আগস্টের রক্তাক্ত সাভার।
এ এক শোকগাথা নয়, এ এক কলিজা ছিঁড়ে যাওয়া আর্তনাদ, যেখানে একটিমাত্র রাজনৈতিক চেয়ার বাঁচাতে গুলি করা হয়েছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বুকে।
কতটা পাষণ্ড হলে নিজের দেশের ছাত্রদের বুক লক্ষ্য করে গুলি চালানো যায়? কতটা হায়েনার মতো নিষ্ঠুর হলে মায়ের কোল খালি করা যায়? সাভার আজও সেই প্রশ্নের জবাব চায়।
“বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নামা ছেলেগুলো আজ নেই”
সাভারের ছাত্ররা রাজপথে নেমেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে তারা চেয়েছিল দেশটাকে একটু ন্যায়ভিত্তিক করতে।
কিন্তু সেই স্বপ্নের বদলে তারা পেল বুলেট, পুলিশের বুলেট! শাসকের চেয়ার রক্ষার গুলি!
শুধু এক দিনে সাভারের মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ৫৫টি তাজা প্রাণ। আর এনাম মেডিকেল কলেজের শয্যাগুলোতে নিথর হয়ে গেছে স্কুল-কলেজের পোশাক পরে থাকা সেই ছেলেগুলো। শুধু কি তা-ই? পাড়ায় পাড়ায়, গলিতে গলিতে, মসজিদে মসজিদে আজও শোনা যায় সেই কান্না, “আমার ছেলেটা আর ফিরবে না!”
“ কাফী-জামান সিন্ডিকেট: পুলিশের পোশাকের আড়ালে লাশের ব্যবসা”
পুলিশের কিছু অফিসার বুলেট চালানোর আগে কি একবারও ভেবেছিল, এরা কার বুকে গুলি চালাচ্ছে? না!
কারণ ওরা ছিল ‘কাফী-জামান সিন্ডিকেট’-এর দোসর। শাসক হাসিনার পদত্যাগের আগাম খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের সাথে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী। আর সেখান থেকে ফোনে নির্দেশ দিয়েছিল“ গুলিও, আর গুলিই!”তারই নির্দেশে মডেল থানার ওসি শাহ জামান হয়ে গেল বুলেটের সেনাপতি।
“মায়ের কোলে সন্তানের লাশ, গলিতে পুড়ে যাচ্ছে থানার দেয়াল ”
গণহত্যা যখন রাষ্ট্রের হাতের খেলনা হয়ে যায়, তখন জনগণ আর চুপ করে থাকে না।
সাভারের ছাত্ররা মরেছে ঠিকই, কিন্তু মরার আগে চোখে চোখ রেখে শাসকের শেষ অমানবিক মুখোশ খুলে দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে সাভার, আশুলিয়া আর ধামরাই থানার দেয়াল।
পুলিশের লাশ ঝুলেছে পদচারী সেতুতে। এটা কোনো বিজয় নয় এটা হাহাকার! হতাশ মানুষের শেষ আর্তনাদ! যখন রাষ্ট্র ন্যায় দিতে ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষোভে মানুষ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে।
“ সাংবাদিক, গুলি খেয়েছে সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন নবী, ডান চোখে অন্ধ। গুলিতে কেটে ফেলতে হয়েছে মনঞ্জয়ের হাত। প্রেসক্লাবও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটা রাষ্ট্রযন্ত্র যদি এতটা পচে যায় যে জনগণের রক্ত ছাড়া আর কিছু দেখে না, তাহলে সেই রাষ্ট্রের পতন অনিবার্য।
“মামলার ফাঁদ, চাঁদাবাজি আর লুটপাট, কাফী-জামানের পুলিশি সাম্রাজ্য”
একটা কমান্ডিং অফিসার, যে নিজে নিরাপদে গিয়ে আরেকজনকে গুলি নির্দেশ দেয়! কাফী আর জামান মিলে থানাকে বানিয়েছিল চাঁদাবাজির আখড়া। গ্রেফতার বাণিজ্য, মিথ্যা মামলা, মুসুল্লি থেকে ব্যবসায়কেউ বাদ যায়নি এই সিন্ডিকেটের নোংরা হাত থেকে।
তাদের পাপের ফলেই আজ পুরো পুলিশের মর্যাদা রক্তমাখা ধুলোয় মিশে গেছে।
“ এই রক্তের বিচার হবে না? ”
আজও সাভারের গলি গলি কাঁদছে। আজও শত শত মা শোকে পাথর হয়ে গেছে, “আমার ছেলেটা তো অন্যায় করেনি! কেন তাকে মারলে?” কাফী-জামান আর তাদের লেলিয়ে দেয়া হায়েনাদের বিচার হবে না? রাষ্ট্র যদি এসব খুনির বিচার না করে, তাহলে আর রাষ্ট্র থাকবে কোথায়?
❝ সেনাপ্রধানের প্রতিশ্রুতি: আমরা বিশ্বাস করতে চাই! ❞
সেনাপ্রধান বলেছেন, “প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হবে, বিচার হবে।” আমরা এই কথায় আশ্বাস খুঁজছি। কারণ যদি এই রক্তের বিচার না হয়, যদি এই ৫৫টা ছেলেমেয়ের মৃত্যু অযথা হয়—তাহলে আর কেউ এই দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না!
“ সম্পাদকীয় বোর্ডের দাবি ”
রাষ্ট্রকে স্পষ্ট বলতে হবে।
১ কাফী-জামান সিন্ডিকেটের এক একজন খুনিকে চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।
২) নিহত শহীদদের পরিবারকে রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
২) এমন অন্যায় আর কখনো যেন না হয়, পুলিশকে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত করতে হবে।
“ শেষ কথা ”
সাভারের রক্তাক্ত রাজপথ আমাদের শিখিয়েছে, রক্ত চুপচাপ মাটিতে শুষে নেয় না সব অন্যায়। কোনো না কোনোদিন, কোনো না কোনো প্রজন্ম এই বিচার আদায় করে ছাড়ে। আজ তাই আমাদের প্রশ্ন, কতটা খুন হলে তোমরা থামবে? কতটা লাশ পেরোলেই ন্যায় ফিরবে?
জেগে ওঠো বাংলাদেশ! জেগে ওঠো সাভারের মায়েরা! জেগে ওঠো সেই ছাত্রদের ভাই-বোনেরা! তাদের রক্ত বৃথা যাবে না, এই দেশের আদালতে কাফী-জামানের বিচার হবেই!