১/কোরবানি কার উপর ওয়াজিব :
১০ই জিলহজ ফজর থেকে ১২ই জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নর-নারী প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপার অলঙ্কার, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, এসব কিছুর মূল্য কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব যোগ্য। (সহীহ মুসলিম ১/৩১৫,আলমগিরি ৫/২৯২)
২/নাবালেগের কোরবানি :
নাবালেগ বা পাগল নেসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে। বরং তা মুস্তাহাব। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬,রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬,কাজীখান ৩/৩৪৫)
৩/মুসাফিরের জন্য কুরবানী:
যে ব্যক্তি কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তথা ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। (আল মুহাল্লা ৬/৩৭,আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫)
৪/গরিবের কোরবানি:
গরিব ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি কোরবানির নিয়তে কোন পশু কিনে তাহলে তা কোরবানি করা
ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২)
৫/কোরবানি করার সময় :
জিলহজের ১০,১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা উত্তম। কোন ব্যক্তি যদি কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানি না করে, তাহলে যদি সে পশু ক্রয় করে থাকে তাহলে সেই পশু সদকা করে দেবে। আর যদি ক্রয় করে না থাকে,তবে একটি ছাগলের মূল্য দান করে দিবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১)
৬/কোরবানির পশু সমূহ ও তার বয়স :
উট(৫বছর),গরু, মহিষ(কমপক্ষে ২ বছর) , ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা (কমপক্ষে ১ বছরের) দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য হালাল পশু যেমন হরিণ, বণ্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।(কাযীখান ৩/৩৪৮)
৭/ শরিকে কোরবানি :
ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে।একাধিক ব্যক্তি মিলে দিলে কারোরটাই সহিহ হবে না। আর উট, গরু-মহিষে সর্বোচ্চ ৭জন শরিক হতে পারবে। ৭এর অধিক হলে কারো কোরবানি হবে না, যেমনিভাবে কারোর অংশ কম হলে হবে না ও গোশত খাওয়ার নিয়ত হলেও হয়না। উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত পশু সাত ভাগে কোরবানি দেওয়া জায়েজ, তাহা সাতের কমে যে কোন সংখ্যায় যেমন ২,৩,৪,৫ ও ৬ ভাগেও জায়েজ। (মুসলিম -১৩১৮)
৮/কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ:
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরীক হওয়া যাবে।এতে কোরবানি এবং আকিকা দুটোই সহিহ হবে। (রদ্দুল মুহতার -৬/৩২৬)
৯/ হারাম টাকায় কোরবানি :
হারাম টাকায় কোরবানি সহিহ হয় না। অতএব, নিজের বা শরিকদের কোন একজনের পুরা বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয়, তাহলে কোনো শরীকের কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (আলমগীরী -৫/৩৪২)
১০/জবাইয়ের মাসআলা :
*নিজের পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কোরবানি দাতা পুরুষ হলে জবাই স্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো।
**জবাইকারি জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করবে।অনেক সময় জবাই কারির জবাই সম্পন্ন হয় না। তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ জবাইয়ের আগে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়তে হবে। যদি কোন একজন না পড়ে তবে ওই কোরবানি সহিহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না।
***মহিলাদের জবাইয়ের পদ্ধতি জানা থাকলে এবং জবাই করতে সক্ষম হলে তারাও জবাই করতে পারবে।
****জবাইয়ের জন্য পশু শোয়ানোর আগেই ছুরি ধার করে নিবে। পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধার দেয়া বা অন্য কোন কারণে জবাইয়ে বিলম্ব করা ঠিক নয়। অনুরূপভাবে পশুর সামনে ছুরি ধার দেওয়াও ঠিক না।
( বায়হাকী -৯/২৮০)
*****জবাইয়ের জন্য পশুকে কেবলামুখী করা এবং জবাই কারিও কেবলামুখী হওয়া সুন্নত। (আবু দাউদ -২৭৯২)
১১/কোরবানি দাতার করণীয় আমল
*কোরবানি দাতার জন্য প্রথম জিলহজথেকে ১০ তারিখ পশু কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত নখ চুল এবং শরীরের কোন কিছু না কাটা মুস্তাহাব। (মুসলিম -১৯৭৭)
**কোরবানি দাতার সামর্থ্য থাকলে একাধিক কোরবানি করা উত্তম। হাদিস শরীফে এসেছে, নবী করিম (সাঃ) সাদা – কালো বর্ণের দুটি দুম্বা নিজ হাতে কোরবানি করেছেন।(মুয়াত্তা মালেক, সহিহ মুসলিম)
১২/কোরবানির পশুর চামড়া :
কোরবানির পশুর চামড়া কোরবানি দাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। (হিন্দিয়া-৫/৩০১)
তবে কোরবানির পশুর চামড়া পুরোটাই বা তার বিক্রিত টাকা কোন দ্বীনী মাদ্রাসায় দেওয়া সবচেয়ে উত্তম।
এতে দানেরও সওয়াব পাওয়া যায়,আবার ধর্মীয় শিক্ষার কাজে সহযোগিতার সওয়াবও হয়।
এতদসংশ্লিষ্ট যাবতীয় মাসআলা সমূহ ধর্মীয় পুস্তকাদিতে প্রচুর রয়েছে,এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার সবই উল্লেখ অসম্ভব।জ্ঞান পিপাষুরা সেখানে দেখে নিতে পারেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করার তাওফীক দান করুন আমীন।
(লেখক :মুফতি মোঃ জহিরুল ইসলাম সিরাজী