আমরা কার্টুন প্রদর্শন বন্ধ করবো না: ম্যাক্রোঁ।

0

Our Times News

গত জুমাবার প্যারিসে ক্লাসে মুসলমানদের জানের চেয়েও প্রিয় মহানবী হজুরে পুরনূরের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে সামুয়েল পাতি (৪৭) নামের ইতিহাস ও ভূগোলের এক ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষক। এরপর তার বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মুসলিম বিভিন্ন অভিভাবক অভিযোগ করেন। এতে কোনো কাজ হওয়ায় এক পর্যায়ে আব্দুল্লাখ আনজরভ (১৮) নামের এক চেচেন মুসলিম তরুণ রাস্তায় ঐ শিক্ষককে কল্লা কেটে কতল করে। পরে সেও পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়।

বুধবার প্যারিসের সরবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংশ্লিষ্ট এক অনুষ্ঠানে প্রায় চারশ’ লোকের সমাবেশ ঘটে। তাতে নিহত পাতিকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘লিজিয়ন অব অনার’ দিয়েছে ফরাসি ইসলামবিদ্বেষী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ; আর বলেছে: তাকে (সামুয়েল পাতি) হত্যা করা হয়েছে। কারণ, ইসলামপন্থী উগ্রবাদীরা আমাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। আমরা কার্টুন ত্যাগ করবো না। আর পাতি জীবন দিয়েছেন ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে। তিনি এ প্রজাতন্ত্রের মুখ।

এদিকে, সেদিন (বুধবার) ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর জ্যান-ফ্রাঙ্কোয়েস রিকার্ড জানিয়েছেন, নিহত সামুয়েল পাতির সন্ধান দিতে সহায়তা করায় ১৪ ও ১৫ বছর বয়সী আরো দু কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হলো।

উল্লেখ্য, ফ্রান্সে ঘোষণা দিয়ে হুজুরে পাকের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করা হয়। বিষয়টিকে তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে থাকে। অথচ নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অন্যের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার বিষয়টি আদৌ বিবেচনায় নেয়া হয় না।

ওদিকে, মঙ্গলবার ফ্রান্সের কর্তৃৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব প্যারিসের নিম্নআয়ের মানুষের বসতি গ্র্যান্ড পানতিনের একটি মসজিদ বুধবার থেকে ছ’ মাসের জন্যে বন্ধ করা হয়েছে। অভিযোগ – ঐ শিক্ষককে হত্যার আগে মসজিদটির ফেসবুক পেজ থেকে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছিলো। মসজিদটি সাময়িকভাবে বন্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাস ঠেকানো।

মসজিদটিতে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লী নামাজ পড়তেন। কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশনার একটি নোটিশও মসজিদের বাইরে লাগিয়ে দিয়েছে দেশটির পুলিশ।

এদিকে, সোমবার ঐ নিহত শিক্ষক সামুয়েল পাতিকে ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করে তার জন্যে শুক্রবার সব মসজিদে প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের এক ইমাম প্যারিসের উপকণ্ঠ দ্রান্সির এক মসজিদের ইমাম হাসেন চালঘুমি!

সাংবাদিকদের হাসেন চালঘুমি বলেন: ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলমানদের ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ইসলামী চরমপন্থীর বিষয়ে সজাগ হওয়ার এখনই সময়। তিনি (নিহত শিক্ষক) মত প্রকাশের স্বাধীনতার শহীদ এবং এমন এক জ্ঞানী ব্যক্তি – যিনি সহিষ্ণুতা, সভ্যতা এবং অন্যকে সম্মান করতে শেখাতেন। শিক্ষককে জবাই করে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। ইমাম সমাজ, বাবা-মা, সুধী সমাজ – সবাই জেগে উঠুন। কেননা, আপনার ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। ভিন্ন মতের কারণে কাউকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা বন্ধ করতে হবে। ফ্রান্সে সবার অধিকার আছে। এ প্রজাতন্ত্রে যা যা ভালো আছে – সেসব সম্পর্কে সন্তানদের জানানো উচিত বাবা-মায়েদের।

সূত্র: আল-আরাবিয়া, আই উইটনেস নিউজ, ডয়চে ভেলে, রয়টার্স ও আল-জাজিরা।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে