আরব জাহানে তুরস্কের প্রভাব জেঁকে বসছে, পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে উছমানীয় সালতানাতের স্বপ্ন!

0

আওয়ার টাইমস্ নিউজ।
মধ্যপ্রাচ্যের আধিপত্যের রাজনীতিতে তুরস্ক কোনো নতুন নাম নয়। দেশটির উছমানীয় সালতানাত ৫০০ বছর ধরে এ অঞ্চল শাসন করেছে। ২০১১ সালের আরব বসন্তে ইসলামপস্থী আন্দোলন দমিয়ে দিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলো এ অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, তুরস্ক এখানে আরো দৃঢ়ভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করে। তুরস্কের শক্তিশালী নেতা রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান দেশটিকে ইসলামী শাসনের মডেল হিসাবে এবং নিজেকে মুসলিম জাহানের নেতা হিসাবে তুলে ধরেন।

বিগত বছরে তুরস্ক উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় ঘাঁটি গেড়েছে, ইরাকের ভেতরে আক্রমণ করেছে এবং লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে। ২০১৬’র পর থেকে দেশটির সামরিক ব্যয় প্রায় অর্ধেক বেড়ে গেছে। সম্প্রতি তুরস্ক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে – বিশেষ করে, তুর্কি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে।

তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে। সেই প্রচেষ্টা আপাতত সফল না হলেও দেশটি সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এখনো নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তুরস্ক সেখানে পুলিশদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, একটি সিভিল সার্ভিসে অর্থায়ন করছে এবং দুর্বল সিরিয়ান পাউন্ডকে তুলনামূলক শক্তিশালী তুর্কি লিরা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে। সিরিয়ার আজাজের মতো শহরগুলোতে দ্রুত তুর্কি প্রভাব জেঁকে বসেছে। তুরস্ক বর্তমানে তার সীমান্তের ১৪৫ কিঃমিঃ দূরে বিস্তৃত সিরিয়ার একটি ৩০ কিঃমিঃ গভীর উপত্যকা অধিগ্রহন করে রেখেছে।

এরদোয়ান উত্তর ইরাকের কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলেও পিকেকের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তুরস্ক জানিয়েছে – তারা এ বছর ইরাক ও সিরিয়ায় চোদ্দশ’ কুর্দি গেরিলাকে নিষ্ক্রিয় করেছে। অনেকের ধারণা, তুরস্ক ইরাক সীমান্তে বাফার জোন তৈরি করতে চায় – যেমনটি তারা সিরিয়ায় করেছে।

কোন দেশগুলো পূর্ব ভূমধ্যসাগরের কোন অংশ এবং এর নিচে লুকায়িত গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক চলে আসছে। এরদোয়ান আশঙ্কা করেছিলেন যে, মিশর, ইসরায়েল, গ্রীস ও সাইপ্রাসের একটি জোট তুরস্ককে এ অঞ্চলে অকেজো করে দিতে পারে। তাই, গত বছর তিনি লিবিয়ার জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের সাথে একটি চুক্তি করেন – যা তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছে এবং তুরস্ককে গ্রীক সাগরে খননের বৈধতা দিয়েছে। বিনিময়ে তুরস্ক লিবিয়ার সরকার এবং তার মিত্রদের কাছে সেনা, অস্ত্র, ড্রোন ও ভাড়াটে বাহিনী সরবরাহ করেছে। তুরস্ক এখন ভূমধ্যসাগরের ৬০০ কিঃমিঃ অঞ্চল দখল করে রাখা একটি শক্তিশালী দেশ। বর্তমানে তুরস্ক তিউনিসিয়া-লিবিয়া সীমান্তের নিকটবর্তী আল-ওয়াতিয়ায় একটি বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ করছে। তার নৌবাহিনী লিবিয়ার পশ্চিম উপকূল রক্ষা করছে।

এরদোয়ান অন্যান্য জায়গাও সক্রিয়। তিনি কাতারে একটি তুর্কি সামরিক ঘাঁটি গেড়েছেন। সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নিষেধাজ্ঞার শিকার কাতার তুরস্কের ইসলামপন্থী আন্দোলনের সহযোগী ও সমর্থক। এরদোয়ান ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধেও আগ্রহও দেখিয়েছেন। তিনি দেশটির নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদীর পক্ষে যুদ্ধরত ইসলামপন্থীদের জন্যে তুরস্কে নিরাপদ আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।

তুরস্ক আশা করছে যে, লোহিত সাগরের ওপারে সুদানে বিধ্বস্ত উছমানীয় বন্দর সুকিনের বিকাশ ঘটাবে। তারা সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে তাদের বৃহত্তম বিদেশী ঘাঁটি গেড়েছে। কাতার তুরস্কে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এ বছরের শুরুর দিকে দেশটি তুরস্কের সাথে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মুদ্রা-অদলবদল চুক্তি করে দুর্বল লিরাকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে। এটি লিবিয়ায় তুরস্কের অর্থায়নে সহায়তা করতে পারে। সেখানে শান্তিকালীন পুনর্গঠন পুনরায় শুরু হলে, তুরস্ক নতুন চুক্তি জিতে নিতে পারে বলে আশা করছে।

তুরস্কের আধিপত্য বিস্তার অনেকেরই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিশর লিবিয়া সীমান্তে তার বাহিনীকে একত্রিত করেছে এবং তুরস্ক আরো অগ্রসর হলে, তারা সীমান্ত অতিক্রমের শপথ করেছে। সউদী আরব ও ইসলামবিদ্বেষী ইউএই সম্ভবত মিশরকে সমর্থন দেবে। তাই, পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। তবে তুরস্ক নির্ভিকভাবে আরব জাহানে তার পদচিহ্নের বিস্তার ঘটাচ্ছে, কূটনীতির চেয়ে শক্তির প্রয়োগ বেশি করছে এবং সমগ্র আরব জাহানে প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। সূত্র: দি ইকোনোমিস্ট।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে