এরদোয়ানের আবৃত্তিতে ইরানের আঁতে ঘা লাগার কারণ!

0

Our Times News

তারা আরাস নদ আলাদা করে পাথর-রড দিয়ে ভরাট করেছে। আমি তোমাদের থেকে আলাদা হবো না। তারা আমাদের জোর করে আলাদা করেছে।

আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের বিজয় উদযাপনে অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশটির একটি কুচকাওয়াজে আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহান আলীয়েভের উপস্থিতিতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান তাঁর ভাষণে উল্লিখিত পংক্তি সম্বলিত একটি কবিতা আবৃত্তি করায় ইরান চটেছে! পরদিন (শুক্রবার) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেহরানে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত ডেরিয়া ওর্সকে ডেকে তাদের ভাষায় এরদোয়ানের ঐ ‘হস্তক্ষেপবাদী’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্যের কৈফিয়ত চেয়েছে! ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন: তুর্কি রাষ্ট্রদূতকে একথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অপর দেশের আঞ্চলিকতার দাবি ও সালতানাতের যুগ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। ইরান তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ব্যাপারে কারো সঙ্গে আপোষ করবে না। ইরান তার জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।
সেদিন (শুক্রবার) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহম্মদ জাওয়াদ জারিফ এক টুইটে বলেছেন: কেউ কি তুর্কি প্রেসিডেন্টকে একথা বলে দেয়নি যে, তিনি যে কবিতা আবৃত্তি করেছেন, তা আরাস নদীর উত্তরে অবস্থিত ভূখণ্ড তার মাতৃভূমি ইরান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার বেদনায় রচনা করেছিলো! এরদোয়ান কি একথা জানেন না যে, তিনি তার কবিতার মাধ্যমে প্রকারান্তরে আজারবাইজানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন? আমাদের প্রিয় আজারবাইন নিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করার অধিকার কারো নেই।
উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি আজারির বসবাস ইরানে! আজারবাইজানের জনসংখ্যা মাত্র এক কোটির একটু বেশি। কিন্তু এনসাইক্লোপিডিয়া বৃটেনিকার মতে, ইরানবাসী আজারিদের সংখ্যা দেড় কোটি – যা দেশটির জনসংখ্যার ১৮% তথা দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী এবং পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আর্দাবিল ও জানজান প্রদেশে তারাই সংখ্যাগুরু। ইরানের এ প্রদেশ ৪টিকে ইরানি আজারবাইজান বলা হয় – যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আজারবাইজানের সীমান্তে অবস্থিত এবং আরাস নদের মাধ্যমে আজারবাইজান থেকে ভৌগলিকভাবে আলাদা। আগে ইরানি আজারবাইজান মূল আজারবাইজানের অংশ ছিলো। কিন্তু ১৮২৬-১৮২৮ সালে রুশ সাম্রাজ্য বনাম কাজার ইরান সাম্রাজ্যের যুদ্ধে ইরান পরাজিত হলে, ১৮২৮ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী উভয় পক্ষ ‘তুর্কমেনচায় চুক্তি’ করে আজারবাইজানকে ভাগাভাগি করে নেয়। এতে তারাস নদের উত্তরে বর্তমান আজারবাইজান পড়ে রুশ সাম্রাজ্যের ভাগে আর এ নদের দক্ষিণে পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আর্দাবিল ও জানজান তথা ইরানি আজারবাইজান পড়ে কাজার ইরান সাম্রাজ্যের ভাগে।

আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধে আজারবাইজান তাদের ভূখণ্ড জাবরাইল জেলা উদ্ধার করেছে। আর এখানেই আলোচ্য তারাস নদ আজারবাইজান-ইরান সীমান্ত দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। এ নদের উপর নির্মিত খোদাফেরিন সেতু-১ ও খোদাফেরিন সেতু-২ আজারবাইজানের জাবরাইল জেলা ও ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশকে তথা এ দু দেশকে সংযুক্ত করেছে।

নাগোর্নো-কারাবাখ ইস্যুতে এতোদিন ইরান নিরপেক্ষ থাকার ভান করে গোপনে আর্মেনিয়াকে মদদ দিয়েছে; যদিও সংখ্যাগুরু আজারিই শিয়া! কিন্তু সম্প্রতি সুন্নী রাষ্ট্র হয়েও তুরস্ক নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানকে সরাসরি সমর্থন দেয়ায়, কিছুদিন আগে ইরানের প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে আর্মেনিয়াকে নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের হাতে ছেড়ে দিতে বলায়, সম্প্রতি তেহরানের রাস্তায় বিপুল আজারি বিক্ষোভ দেখিয়ে আর্মেনিয়ার মৃত্যু কামনা করায় এবং আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাগের বহু এলাকা উদ্ধার করে বিরাট বিজয় অর্জন করায়, তেহরান এখন চাপে পড়েই আজারবাইজানের পক্ষে কথা বলছে। এছাড়াও ইরানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আজারবাইজান। ইরানের প্রশাসনেও বহু আজারি কাজ করেন।

ইরানের আশংকা আবৃত্ত ঐ পংক্তির মাধ্যমে খিলাফত ও সালতানাতপন্থী এরদোয়ান ইরানবাসী আজারিদেরকে তারা যেসব প্রদেশে সংখ্যাগুরু, সেসব নিয়ে ইরান থেকে আলাদা হয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে আবার একীভূত হতে উসকানি দিয়েছেন! আর ইরানের আজারিরা সত্যিই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তেমন কিছু করে বসলে, তা ইরানের সার্বভৌমত্বের জন্যে অনেক বড় একটি হুমকি বা চ্যালেঞ্জ হবে। আর এ কারণেই এরদোয়ানের উপর ক্ষেপেছে ইরান। নিজস্ব প্রতিবেদন।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে