নাইজারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৩৭ জন নিহত!

0

আওয়ার টাইমস্ নিউজ।
পরশু ফরাসী সাবেক উপনিবেশ (১৯০০-১৯৫৮ খৃঃ), গরীব দেশগুলোর মাঝে ১৮৯তম রেঙ্ক এবং পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় ১০০% মুসলিম-প্রধান ও সাহারা মরুভূমির অন্যতম দেশ নাইজারের তিনটি গ্রামে আবারো সন্ত্রাসী হামলায় বহু লোক নিহত হয়েছেন। এতে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ২১শে ফ্রেব্রুয়ারীতে নির্বাচিত দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ বাজৌম – যিনি ২৭শে এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল (সোমবার) এক টুইটে নিহতদের স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন: বনিবাঙ্গু গণহত্যার পরে, গতকাল সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত একই কায়দায় ইন্তাজায়াইন ও বাকোরাতের শান্তিপূর্ণ বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে আঘাত করলো।

সোমবার দেশটির মুখপাত্র জাকারিয়া আব্দুর রহমানে সরকারি টেলিভিশনে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন: রোববার মালি সীমান্তে নাইজারের কয়েকটি গ্রামে হামলায় ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। এখন বেসামরিক লোকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। সশস্ত্র ডাকাতরা তাদের অভিযানকে আরো নৃশংসতা ও বিভৎসতার দিকে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আক্রান্ত অঞ্চলটিতে সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করবে। এ কাপুরোষিত ও অপরাধী কর্মকাণ্ডের দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটা ছিলো এক সপ্তাহে নাইজারবাসীর উপর দ্বিতীয় মারাত্মক আক্রমণ। ১৫ই মার্চ মালির সীমান্তের নিকটবর্তী টিলাবেরী অঞ্চলের বানিবাঙ্গু বিভাগের সাপ্তাহিক বাজার থেকে ফিরে আসা অন্তত ৫৮ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে অজানা বন্দুকধারীরা আক্রমণ করে হত্যা করে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, রোববার বন্দুকধারীরা মোটরবাইকে ইন্তাজায়ান, বাকোরাত ও উইসটেন গ্রামে এসে হামলা চালায়। তারা সামনে যা কিছু নড়তে দেখেছে, তার ওপরই গুলি চালিয়েছে! সোমবার সকালে নিহতের সংখ্যা ৬০ বলা হলেও এখন তা বেড়ে ১৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছর ২রা জানুয়ারীতে টিলাবাড়ির মঙ্গাইজে জেলার দুটি গ্রামে হামলায় ১০০ জন নিহত হন। নাইজারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দু রাউন্ডের মাঝে এটা দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপতম গণহত্যার ঘটনা। গত বছরের জানুয়ারীতে নাইজারের সেনাবাহিনী চেনিগোদার একটি সামরিক শিবিরে হামলায় ৮৯ জনকে হারায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিল্লাবেরি অঞ্চলের ইনেটস-এ একটি আক্রমণে ৭১ জন নাইজারীয় সেনা নিহত হয়।

উল্লেখ্য, সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর হতে লোহিত সাগর পর্যন্ত একটি বিশেষ এলাকাকে ‘সাহেল’ বা ‘সাহিল’ অঞ্চল বলা হয়। এখানকার ফরাসী সাবেক উপনিবেশের মুসলিমপ্রধান ও আধা-রাষ্ট্রপতি শাসিত ৫টি দেশ তথা বুরকিনা ফাসো, চাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারকে নিয়ে ফ্রান্সের সমর্থনে পশ্চিম আফ্রিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার নামে মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকশুতে ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালে ‘জি৫’ নামে একটি জোট গঠিত হয় – যাদের সম্মিলিত সামরিক বাহিনী রয়েছে। জি৫ বাহিনীর মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী বিবেচিত চাদিয়ান সেনাবাহিনীর ১,২০০ সদস্যের একটি দল নাইজারে মোতায়েন রয়েছে। তা সত্ত্বেও সেখানে সন্ত্রাসী হামলা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। জি৫-এর দেশগুলোর সরকারগুলোর নেপথ্যে ফ্রান্সের আঁতাত ও মদদ রয়েছে। তাই, এখানকার ইসলামপন্থী দলগুলো এসব দেশের নির্বাচন ও সরকারকে বিশ্বাস বা সমর্থন করে না। ফলে, কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেই পাশ্চাত্য ও সেকুলার মিডিয়াগুলো মুজাহিদ দলগুলোকে একচেটিয়া দোষারোপ করে থাকে যেনো সাধারণ মুসলমানদের মাঝে জিহাদী চেতনা জাগতে না পারে; মুসলিমদের সোনালী দিন ফিরে না আসে। অথচ সেসব ঘটনার সাথে মুজাহিদদের আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি নেই কিংবা যাদের উপর হামলা হচ্ছে, তারা কতোটা নির্দোষ অথবা মাঝে মাঝে যেসব হামলার কথা কোনো ইসলাম সশস্ত্র দল স্বীকার করেছে বলে বলা হয়, সেসবের সূত্র কতোটা নির্ভরযোগ্য – এসব প্রশ্নের উত্তর প্রায়ই অজানা থেকে যায়।

বুরকিনা ফাসো, চাদ, মালি ও নাইজার উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংকটে পতিত বা নিরাপত্তাহীন দেশগুলোর প্রথম কাতারে রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসেব মতে, এখানে ৮৫১,০০০ শরণার্থী এবং প্রায় ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছেন! সূত্র: আল-জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, দ্য গার্ডিয়ান ও অন্যান্য।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে