বিদ্রোহীদের হামলায় আফ্রিকার দেশ চাদের প্রেসিডেন্ট নিহত!

0

রিপোর্টার: সাইফুল ইসলাম।
আওয়ার টাইমস্ নিউজ। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) আফ্রিকার ফরাসী সাবেক উপনিবেশ এবং সাহারা মরুভূমির অন্যতম মুসলিম দেশ চাদে টানা ষষ্ঠবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ফ্রান্স ও আমেরিকার মিত্র ইদ্রিস ডেবি ইতনো (৬৮) বিদ্রোহীদের হামলায় আহত হয়ে পরে মারা গেছেন।

আজ চাদের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আজিম বেরমান্দোয়া আগুয়ানা বলেছেন: এ সপ্তাহের শেষ দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে লিবিয়া সীমান্তে বিদ্রোহীদের সাথে সংঘাত পরিদর্শন করতে গিয়ে আহত হন প্রেসিডেন্ট। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন তিনি। তাঁর ছেলে চার তারকাবিশিষ্ট জেনারেল মেহমেদ বিন ডেবির ইতনোর (৩৭) নেতৃত্বে একটি সামরিক কাউন্সিল তাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছে। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে কারফিউ দেয়া হয়েছে এবং দেশের সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আল-জাজিরার রিপোর্টার হিবা মর্গান রাজধানী এনজামেনা থেকে জানিয়েছেন, সামরিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার বিধান দেশটির সংবিধানে নেই। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে বা তিনি মারা গেলে, তার পরে সংসদের স্পিকার ৪০ দিনের জন্যে দেশের দায়িত্ব নেবেন। কাজেই, নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্পিকারের দেশ চালানোর বিধান। তবে সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে, সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং সংবিধানও স্থগিত করা হয়েছে। সুতরাং তারা কী করছে? তারা সংবিধানের বদলে তাদের নিজস্ব বিধি-বিধানের জারি করেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে, ফ্রান্স সাহসী এক বন্ধুকে হারালো – যিনি চাদের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার ব্যাপারে দৃঢ়চেতা ছিলেন। চাদে নাগরিক শাসনে দ্রুত ফিরে আনতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে উত্তরণের জন্যে ফ্রান্স অনুরোধ করছে আর অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক সংস্থা গঠনের বিষয়টি নোট করেছে।

১৯৯০ সালে এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে চাদের ক্ষমতা দখল করেন ইদ্রিস ডেবি। এরপর থেকে টানা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কয়েক দশকে তার বিরুদ্ধে বেশ ক-বার বিদ্রোহ দেখা দিলেও তিনি তা সফলভাবেই দমন করেছেন। এতে ফ্রান্স তাকে সহায়তা করেছে। ২০১৯ সালে লিবিয়া থেকে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলা মোকাবিলায় ফরাসী বিমান হামলার সহায়তা নেয় তার সেনাবাহিনী। মৃত্যুর আগেই তিনি নির্বাচনে তার বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন। এর আগে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেসরকারি ফল ঘোষণায় বলা হয়, ৭৯.৩% ভোট পেয়ে ষষ্ঠবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন ইদ্রিস ডেবি।

তবে অনেক দলই নির্বাচন বয়কট করেছে। বিজয়ী ঘোষণার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সমর্থকদের উদ্দেশে বিজয়ের ভাষণ স্থগিত করে চাদের উত্তরাঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে চলমান সামরিক সংঘর্ষ পরিদর্শনে গিয়ে প্রাণ হারালেন ইদ্রিস ডেবি। এ ঘটনার কিছু আগে আমেরিকা সর্তক করে বলেছিলো যে, চাদের বিদ্রোহীরা উত্তর থেকে রাজধানী এজামেনার দিকে যাচ্ছে।

বিদ্রোহী গ্রুপ ফ্রন্ট ফর চেঞ্জ অ্যান্ড কনকর্ড ইন চ্যাড (এফএসিটি) লিবিয়ার উত্তর সীমান্ত জুড়ে রয়েছে। গ্রুপটিকে উত্তর চাদের তানুয়ায় ২০১৬ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠা করেন মেহমেদ মাহদী আলী। তিনি ইদ্রিস ডেবির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। নির্বাচনের দিনে তিবেস্তি ও কেনেম প্রদেশের একটি সীমান্ত চৌকিতে গ্রুপটি আক্রমণ করে। তারপরে কয়েকশ কিঃমিঃ দক্ষিণে অগ্রসর হয়। সূত্র: আল-জাজিরা, দি আফ্রিকা পোস্ট, বিবিসি ও রয়টার্স।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে