মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসীর তালিকাভুক্তির সউদী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরাইল।

0

Our Times News

মঙ্গলবার সউদী কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্স (সিএসএস) এক বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার জন্যে ইসলামী সরকারপন্থীদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুডকে দায়ী করে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্তির পর, গতকাল (রবিবার) এক টুইটে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিয়াদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে – ধর্মের অপব্যবহার করে উসকানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের বিরুদ্ধে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসরাইল খুশি। আমাদের এমন একটি আলোচনার খুবই দরকার – যা সহনশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানাবে।

ব্রাদারহুডের প্রতি সৌদি আরবের দমনমূলক মনোভাবকে বরাবরই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ইসরাইল। কেননা, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ব্রাদারহুডের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে বলে মনে করা হয়।

উল্লেখ্য, মুসলিম ব্রাদারহুডের পথ চলা শুরু ১৯২৮ সালের মার্চে। সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ায় তরুণ হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে সংগঠনটি গড়ে ওঠে। শুরুতে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’ নামে এর যাত্রা শুরু হয়। সন্ত্রাস সৃষ্টির অজুহাতে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ ফাহমি আন-নুকরাশী সংগঠনটিকে বিলুপ্ত করার হুকুম জারি করেন। পরের বছরের ডিসেম্বরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্না সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

১৯৫৪ সালে আরব জাতীয়তাবাদী নেতা গামাল আব্দুন নাসেরের বিপ্লবের প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থন জানায়। কিন্তু মতপার্থক্য ও অবিশ্বাসের কারণে দু পক্ষের মাঝে দ্রুতই সম্পর্কের ভাঙন ধরে। ফলে, প্রেসিডেন্ট নাসেরও দলটির বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চালান। উনি এক হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেলে, এর সম্পৃক্ততার অভিযোগে দলটিকে আবারো নিষিদ্ধ করা হয় মিসরে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নাসেরের আমলে হাজার হাজার ব্রাদারহুড নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন।

আনোয়ার সাদাত ১৯৭১ সালে মিসরে ক্ষমতায় এলে, তার সরকারের সঙ্গেও তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে ব্রাদারহুডের। পরবর্তীকালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে দলটির ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।

আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর, ১৯৭৯ সালে আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি করলে, তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় ব্রাদারহুড। তাই, ১৯৮১ সালে এক সামরিক কুচকাওয়াজ চলাকালে টিভি ক্যামেরার সামনেই মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তরুণ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট খালিদ ইস্তাম্বুলি (২৭) প্রেসিডেন্ট সাদাতকে গুলি করে হত্যা করেন। অবশ্য খালিদ এবং আরো ৩ জনকে এ ঘটনা জড়িত থাকায় কোর্ট মার্শাল করে ১৫ই এপ্রিল ১৯৮২ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়।

ব্রাদারহুড সরকারের স্বীকৃতি পায় ১৯৮৪ সালে এসে। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক তখন এটিকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। তার পতনের পরই দলটি রাজনৈতিক স্বীকৃতি পায়। ২০০৩ সালে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করলে, এর বিরোধিতা করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। আর আস্তে আস্তে মিসরের রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এক পর্যায়ে দেশটির সবচেয়ে পুরানো ও বড় বিরোধী দলে পরিণত হয় দলটি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাণের এ সংগঠন মিসরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই নানা ধরনের সংগঠন পরিচালনা বাড়তে থাকে ব্রাদারহুডের নামে।

এতো কিছুর পরও ২০১০ সাল পর্যন্ত মিসরে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে অন্য ইসলামী দলের সঙ্গে ব্রাদারহুডও নিষিদ্ধই ছিলো। তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই তারা সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। ২০১৩ সালে ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দায়িত্ব নেয়ার পর, মিসরের বর্তমান সামরিক-জান্তা আব্দেল ফাত্তাহ আস-সিসি দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় শুরু করেন। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি ও উইকিপিডিয়া।

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে