স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট:সাইফুল ইসলাম।
আওয়ার টাইমস্ নিউজ: বৃহস্পতিবার (২০ মে) নাইজার ও আলজেরিয়ার অনুরোধে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন: হামাস বনাম ইসরাইলের চলমান সংঘর্ষ অগ্রহণযোগ্য। এ লড়াই অবিলম্বে থামা উচিত। গাজায় ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। দুনিয়ায় কোনো দোযখ থাকলে, তা হলো গাজার শিশুদের জীবন। ৬০ শিশুসহ অন্তত ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসারে দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আলোচনা পুনরায় শুরু করাটা চলমান সংকট ও আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক। গাজায় সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় গুড়িয়ে দেয়াটা চরম উদ্বেগজনক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৫ শিশু ও ৩৮জন নারীসহ এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনীর সংখ্যা ২৩০। আর নিহত ইসরাইলির সংখ্যা ১৩।
আন্তর্জাতিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গাজার ৫০টি স্কুল ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থীর স্কুলজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়সমূহের সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন: সার্বিকভাবে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সহিংসতায় অংশ নেয়া সকল পক্ষের উচিত চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আগে মানবিক বিরতিতে রাজি হওয়া। গত ১০ মে থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ৭৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনী নাগরিক গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের মাঝে ৪৭ হাজার মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। তারা বর্তমানে গাজায় জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ৫৮টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
গাজায় ফিলিস্তিন সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত সেখানে ৩২২ মিলিয়নের বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে ১৮৪টি আবাসিক ভবন, বাড়ী ও ৩৩টি মিডিয়া সেন্টার। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৯২ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-আকসা ব্রিগ্রেডসের প্রভাবশালী সদস্য আবু মুহাম্মাদ বলেছেন: বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে যুদ্ধবিরতি হবে না। চলমান যুদ্ধ দীর্ঘ মেয়াদী হবে এবং ফিলিস্তিনীদের দাবি না মানা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। আমরা যৌথ কমান্ড সেন্টার থেকে স্পষ্টভাবে বলছি – এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এ যুদ্ধ চলবে আরো অনেক দিন। ইহুদিবাদী ইসরাইল হয়তো ভাবছে প্রতিরোধ সংগ্রামীদের গোলা-বারুদ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত – আমরা দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, প্রথমে পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসের আল-জাররা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান; এরপর মসজিদুল আকসায় মুসল্লীদের ওপর ইসরাইলি হামলা বন্ধের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় গাজা থেকে প্রতিক্রিয়া দেখায় ফিলিস্তিনীরা। এখন পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসের আল-জাররা ও মসজিদুল আকসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ফিলিস্তিনীরা কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে না বলে গাজার সংগ্রামী সংগঠনগুলো এর আগেও জানিয়েছে।
ওদিকে, কিছুক্ষণ আগে (বৃহস্পতিবার) পাওয়া খবরে জানা গেছে, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে হামাসের ব্যাপক হামলার মুখে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গাজায় বিবিসির প্রতিনিধি রুশদি আবুয়ালউফ এক টুইটে লিখেছেন জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান মিসরকে জানিয়েছে ইসরাইল। এ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে মিসর।
এর আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রিগেভ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট শর্তেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। সে শর্তে তেল আবিব ও জেরুজালেমে হামলা বন্ধ করতে হবে হামাসের। গাজা থেকে রকেট হামলার কারণে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা সীমান্তে হামাসের সাথে ইসরাইলি বাহিনীর সংঘর্ষ পুরো দমে চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী হামাস ও নিরীহ ফিলিস্তিনীদের বিভিন্ন স্থাপনায় শতাধিকের বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে গাজা প্রায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। গাজায় বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ইসরাইল ইলেকট্রিক করপোরেশন। সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীরা বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত না করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, হামাসের কাছে থাকা তাদের দু সেনার লাশ ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি এক বন্দী ইসরাইলিকেও মুক্তি দিতে হবে। তারপরেই বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে হামাসের সাথে সংঘাতে হাদার গোল্ডেন ও ওরোন শাওল নামে দু সেনা নিহত হয়। এছাড়া, ইথোপিয়ান ইসরাইলি এক বেসামরিক নাগরিক এভেরা মেনগিসতু একই বছর গাজা সীমান্ত অতিক্রম করেন। হিশাস আস-সায়িদ নামে আরেকজন ইসরাইলি নাগরিক গাজায় ভ্রমণে গেলে, তাকে বন্দী করে হামাস। তবে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। সূত্র: বিবিসি, আনাদোলু ও পার্সটুডে।