আওয়ার টাইমস্ নিউজ।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় অভ্যুত্থানের নেতাদের প্রতি দাবি জানিয়েছে গাম্বিয়া। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছিলো পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক মহাসাগরীয় অন্যতম সাবেক বৃটিশ উপনিবেশ (১৮২১-১৯৬৫) এ ক্ষুদ্র ও মুসলিম দেশটি।
গেল বুধবার এক বিবৃতিতে গাম্বিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের যে সামরিক নেতৃবৃন্দ প্রান্তিকীকরণ করেছে, তারাই এখন মিয়ানমার সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। সবশেষ সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ছ’ লাখ রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ফের কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। বানজুল সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন ও বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের হামলায় ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অভিযানে কতো রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, এর সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় ৫৭ সদস্যের ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা – ওআইসির সমর্থন পেয়েছে গাম্বিয়া। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৌদ্ধ-প্রধান দেশটি গণহত্যার বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে; যদিও সাবেক স্টেট কাউন্সিলর ও বর্তমানে সেনাবাহিনীর হাতে আটক অং সান সু চি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অপরদিকে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) চলমান মামলায় আপত্তি দাখিল করেছে মিয়ানমার। গত মাসে এ আপত্তি দাখিল হলেও সম্প্রতি সেই তথ্য সামনে এসেছে। ২৮ই জানুয়ারি আইসিজে প্রেসিডেন্ট আব্দুল কায়ী আহমেদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক নথিতে জানানো হয়েছে, মিয়ানমার তাদের আপত্তির কথা আদালতকে জানিয়েছে। তবে ঠিক কোন কোন বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতেই এ আপত্তি তুলেছে মিয়ানমার।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকান্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঐ মামলায় আদালতে মিয়ানমারের তরফে শুনানিতে অংশ নেন দেশটির সাবেক বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চি। আইসিজে প্রেসিডেন্ট আব্দুল কায়ী আহমেদ ইউসুফ জানিয়েছেন, ঐ মামলায় ২০শে জানুয়ারি আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার। একই সঙ্গে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এসব প্রশ্নের জবাব দিতে ২০শে মে পর্যন্ত সময় পাবে গাম্বিয়া। পরে তা বিবেচনা করে দেখবে আদালত। মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়গুলো সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন – সম্ভবত এসব আপত্তির মাঝে রয়েছে এ মামলার শুনানির এখতিয়ার আদালতের রয়েছে কিনা এবং মামলাটি দাখিলের এখতিয়ার গাম্বিয়ার রয়েছে কিনা, সেসব বিষয়। যুক্তরাজ্যের বার্মা ক্যাম্পেইনের পরিচালক মার্ক ফারমেনার বলেছেন: ‘এসব আপত্তি ব্যর্থ হবে আর এটা বিলম্ব করার কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।’ এ মামলায় হস্তক্ষেপ করতে বৃটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি। আইসিজে ইতোমধ্যে মিয়ানমারে এখনো রয়ে যাওয়া ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে রক্ষায় আরো পদক্ষেপ নেয়ার আদেশ দিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স ও এএফপি।