Our Times News
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজারবাইজানের সেনারা আঘদাম জেলা বুঝে পেয়েছে। আর্মেনিয়ার দখলে থাকা আরো দুটি জেলা (লাচিন ও কালবাজার) আজারবাইজানকে হস্তান্তর করা হবে। আজারি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট আজ (শুক্রবার) আঘদামে প্রবেশ করেছে। ২৭ বছর আগে যেসব আজারি ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হন – এখন তারা ফিরে আসতে পারবেন। তাদের ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আঘদাম এলাকাটি রাজধানী বাকু থেকে ৩৭৮ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে নাগোর্নো-কারাবাখের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ১৯৯৩ সালে জেলাটিকে দখল করেছিলো আর্মেনিয়া। প্রায় ৩০ বছর ধরে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো। তারা সেখানে সরকারও গঠন করে; যদিও সেই সরকারকে আর্মেনিয়াও স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে নাগোর্নো কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত।
আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান লায়লা আব্দুল্লাহ আভা এক টুইটে লিখেছেন: ২৭ বছরের অনুশোচনার অবসান হয়েছে। আমাদের অপরূপ ভূখণ্ডটি আবারও মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।
নিজেদের ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ায় আজারবাইজানের জনগণও বেশ খুশি।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) এএফপির সাংবাদিক ঐ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখেন – আর্মেনীয় সেনারা আঘদামে নিজেদের হেডকোয়ার্টার্স ভেঙে চুরে একাকার করে ফেলছে। এ শহরে গত তিন দশকে তারা এসব প্রতিষ্ঠা করেছিলো। ঐ এলাকার এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি গাজিক গ্রিগোরায়ান (৪০) তখন নিজের বাড়ী ভেঙে ফেলেছেন। উনি বলেন: এখানে আমি রান্নাঘর করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু যেহেতু এখান থেকে চলে যেতে হবে, তাই এখন আমি সব ভেঙে চুরমার করে ফেলছি।
আর্মেনিয়া বিদায় নেয়ার সময় ঐ এলাকা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আজ (শুক্রবার) টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলীয়েভ বলেছেন: তারা বন্য শত্রু। আর্মেনীয়রা নিজেদের চরিত্র বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ করেছে।
সোমবার তিন দশক পর, নাগোর্নো-কারাবাখের দখলমুক্ত ফুজুলি ও জাবরাইলে সামরিক পোশাকে সস্ত্রীক সফরে যান আজারি প্রেসিডেন্ট। তখন তিনি বলেছেন: আর্মেনীয়রা এ অঞ্চলটি ত্যাগের সময়ে সব দালান ধ্বংস করেছে এবং লুটপাট চালিয়েছে। আর্মেনীয়দের মতলব হচ্ছে, আজারীরা যেনো এখানে বসবাস না করতে পারেন। আমরা এখানে বাস করবো! আমরা এখানে চিরদিনের জন্যে বাস করবো! আমরা পুনরায় দালানগুলো মেরামত করবো; সবকিছু করবো। আজারবাইজানের ভূখণ্ডে অপরাধ করায় আন্তর্জাতিক আদালতে আর্মেনিয়াকে জবাবদিহিতা করতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধের পর, ১০ই নভেম্বর রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান নাগার্নো-কারাবাখে যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়। চুক্তির বাস্তবায়ন তদারকি করতে ইতোমধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখে ১৯৬০ জন রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া অধিকৃত অগদাম, লাচিন ও কালবাজার আজারবাইজানের কাছে হস্তান্তর করবে। সে মোতাবেক, আজ আজারি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আদগামের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।
এদিকে, আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং আর্মেনিয়ার পরাজয়ের জেরে সোমবার সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হরাব নাতসিকানিয়ান ইস্তফা দেয়ার পর, আজ (শুক্রবার) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেভিড তুনুইয়ানও ইস্তফা দিয়েছেন। সরকারী সূত্রের বরাতে সেদেশের পত্রিকাগুলো এ খবর জানিয়েছে। স্পুতনিক জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের প্রধান উপদেষ্টা বাঘারশাক হারুতিওনিয়ানকে এ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
আজারবাইজানকে আর্মেনিয়ার অধিকৃত ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত শান্তি চুক্তিতে সই’র পর থেকেই চাপের মুখে রয়েছে পাশিনিয়ানের সরকার। সে দেশের জনগণ এ চুক্তিকে আত্মসমর্পণ হিসেবে অভিহিত করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তারা খোদ প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ানের পদত্যাগ দাবি করেছেন। আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্টও সরকারের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন।
ওদিকে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে চলা ৪৪ দিনের যুদ্ধে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিলেও বিরোধীদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুধবার ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে নিজের অবস্থান এবং তার করণীয় সম্পর্কে ১৫ দফা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি বলেন: দেশকে স্থিতিশীল করা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন আমার দায়িত্ব। আমি এখন পুরোপুরি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
৬ সপ্তাহ চলা যুদ্ধে আজারবাইজান কারাবাখে দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর শুশা দখল করে। আজারবাইজানের একের পর এক হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আর্মেনীয় বাহিনী। এরপরই রাশিয়ার হস্তক্ষেপে দু দেশের মাঝে শান্তি চুক্তি হয়। ফলে, যুদ্ধ ছাড়াই কয়েকটি অঞ্চলের ফিরে পাবে আজারবাইজান। ২৫শে নভেম্বর কালবাজার এবং ১লা ডিসেম্বর লাচিন জেলা হস্তান্তর করবে আর্মেনিয়া। সূত্র: ইয়েনি শাফাক, এএফপি, স্পুতনিক, আল-জাজিরা ও পার্সটুডে।