হাদীসের আলোকে সূরা ইয়াসিনের ফজিলত।

0

আওয়ার টাইমস্ নিউজ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এই কুরআন আল্লাহ তার প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ সা.এর উপর দীর্ঘ তেইশ বছরে অবতীর্ণ করেছেন। এই কুরআন রাসুল সা. এর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা। আল্লাহপাকের এই পবিত্র কুরআন পৃথিবীর অদ্বিতীয় ঐশীগ্রন্থ।

কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতের অনেক ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনুল কারিমে একশত চৌদ্দটি সুরা রয়েছে। সুরা ইয়াসিন ৩৬ নম্বর সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৮৩ এবং এর রুকু সংখ্যা পাঁচটি। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

কুরআনুল কারিমের প্রতিটি সুরার আলাদা ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আজ সুরা ইয়াসিনের ফজিলত নিয়ে কিছু কথা নিবেদন করবো পাঠকমহলে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দাতা ও সাহায্যকারী।

ফজিলতের সূচনা করছি রাসুল সা.এর দশ বছরের বিশেষ খাদেম হযরত আনাস বিন মালিক রা. এর বর্ণনা দিয়ে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি বস্তুরই অন্তর আছে। কুরআনের অন্তর হল সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে আল্লাহ্ তা’আলা তার এ পাঠের বিনিময়ে দশ বার কুরআন পাঠ করার সমতুল্য ছওয়াব নির্ধারণ করবেন।
(জামে তিরমিজি হাদিস নং ২৮৮৭)

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, সুরা ইয়াসিনকে কুরআনের অন্তর বলার কারণ এমন হতে পারে যে, এ সুরায় কেয়ামত ও হাশর – নাশরের বিষয় বিশদ ব্যাখ্যা ও অলংকার সহকারে বর্ণিত হয়েছে।

পরকালের বিশ্বাস ঈমানের এমন একটি মূলনীতি, যার উপর মানুষের সকল আমল ও আচরণের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল। পরকালভীতিই মানুষকে সৎকাজের উৎসাহ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে। অতএব দেহের সুস্থতা যেমন অন্তরের সুস্থতার উপর নির্ভরশীল তেমনি ঈমানের সুস্থতা পরকাল চিন্তার উপর নির্ভরশীল।
(রুহুল মাআনী, মাআরিফুল কুরআনের সূত্রে)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুরাহ ইয়াসীন পাঠ করবে, সেই রাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান – হাদিস নং ২৫৭৪)

আতা ইবনু আবী রাবাহ রহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো দিনের প্রারম্ভে (সকালে) সুরাহ ইয়াসীন পাঠ করবে, তার সকল প্রয়োজন পুর্ণ করা হবে।” (সনানে দারেমী – ৩৪৫৭)

ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে সুরাহ ইয়াসীন পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তার দিনটি সহজ-সাবলীল করা হবে এবং যে ব্যক্তি রাতের প্রারম্ভে (সন্ধ্যায়) সুরাহ ইয়াসীন পাঠ করবে, সকাল পর্যন্ত তার রাতটি সহজ-সাবলীল করা হবে ।
(সুনানে দারেমী – ৩৪৫৮)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন অভাব-অনটনের সময় পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি ও রিজিকে বরকত লাভ হয়।

মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৩১২১)

সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের উপকারিতাঃ
১. আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ হয়।
২. মানুষের মুখের জড়তা দূর হয় এবং মনের ভয়ভীতি কেটে যায়। আল্লাহ তায়ালা’র একত্ববাদ অন্তরে দৃঢ় হয়।
৩. ঘরে বরকত হয়।
৪. বিপদ -আপদ দূর হয়, অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৫. হিংসা,বদনজর, যাদু ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন এবং দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

[লেখত.মুফতী আব্দুল্লাহ ইদরীস ]

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে