আওয়ার টাইমস্ নিউজ।
বাংলাদেশে আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে পরশু আইনজীবী মো. এনামুল কবির ইমনের রিটের (ক্রমিক নং ৫২৪) শুনানি গতকাল (বুধবার) বেলা ১১টার দিকে হয়েছে। এতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রিটটি গ্রহণযোগ্য কিনা এবং আর্জি মোতাবেক আদালত চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে কিনা – অ্যামিচি কিউরি হিসেবে ১৫ই ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মতামত দিতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল, আব্দুল মতিন খসরু, কামাল উল আলম, প্রবীর নিয়োগী ও শাহদীন মালিককে অনুরোধ করেছে। এ আদেশের অনুলিপি আজকের ভেতরেই আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী এম এনামুল কবির ইমন। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাসেল চৌধুরী।
রিট দায়ের করে আইনজীবী মো. এনামুল কবির বলেছিলেন: রিটে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদেরকে বিবাদী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আল-জাজিরায় ১লা ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। তাতে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ প্রতিবেদনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আল-জাজিরা টিভি নেটওয়ার্কের ঐ প্রতিবেদনটিকে অসত্য-বানোয়াট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, আল-জাজিরায় প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদর-দফতর। আল-জাজিরার প্রতিবেদনটির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে। যারা আগেও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
এদিকে, ঐ প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের পর থেকেই এ নিয়ে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা প্রকাশের দাবি করেছে। নইলে, এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন: স্থায়ী কমিটির সভায় আল-জাজিরা টেলিভিশনের দেশ ও দেশের স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচারিত রিপোর্ট সম্পর্কে জনমনে উত্থাপিত অনিবার্য উৎকন্ঠা অবসানের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা প্রকাশের দাবি বিএনপির তরফ থেকে জানানো হয়েছিলো। তা এখনো না জানানোর নিন্দা জানিয়ে শিগগিরই দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবাদ ব্রিফিং অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন: এ বছর হলো আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর বছর। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি এই কথা শুনার জন্যে নয় যে, বাংলাদেশ একটি মাফিয়া দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে! এই কথা শুনার জন্যে নয় – বাংলাদেশ একটা মাফিয়া রাষ্ট্র! এ কথা আমরা আর কখনো শুনতে চাই না। আমরা বলতে চাই এ সরকারকে, আপনারা দয়া করে প্রমাণ করুন – আল-জাজিরায় যা কিছু আসছে, সব মিথ্যা। আমরা আপনাদের সমর্থন দেবো। আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। প্রমাণ করেন। শুধু মুখে ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন: তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আপনাদেরকে প্রমাণ করতে হবে – আল-জাজিরা সঠিক নয়। আল-জাজিরার খবর থেকে জনগণ মুক্তি চায়।
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয় – জনগণের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি অভিযোগের প্রকৃত ব্যাখ্যা দেয়ার বদলে সরকার তার প্রতিবাদ বিবৃতিতে কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যের আড়ালে তা নাকচ করার চেষ্টা করেছে – যা জনগণকে আরো বেশী উদ্বিগ্ন করেছে ও প্রচারিত অভিযোগ সম্পর্কে তাদের উৎকন্ঠাকে আরো ঘনীভূত করেছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন: এ দেশের মানুষের সাথে বিএনপিও ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সরকারের নিকট থেকে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সূত্র: ইনকিলাব ও যুগান্তর ।