
আওয়ার টাইমস নিউজ।
বিশেষ সম্পাদকীয় কলামঃ হুসাইন আল আজাদ
একটা জাতি কেবল তখনই সত্যিকার অর্থে নিঃস্ব হয়ে পড়ে, যখন সে তার বিপ্লবী, বীর সেনানি সাহসী সূর্য সন্তানদের হারিয়ে ফেলে।
আজ বাঙালি জাতি জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনানী মহাবীর যোদ্ধা উসমান হাদিকে হারিয়ে ঠিক তেমনই এক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যে ক্ষতি কোনো সংখ্যায় মাপা যায় না, কোনো শোকবার্তায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। তিনি শুধু একটি নাম ছিলেন না। তিনি ছিলেন একটি সময়ের উচ্চারণ, একটি প্রজন্মের স্পর্ধা, একটি জাতির মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস।
সূর্য অস্ত গেছে, হ্যাঁ, কিন্তু এই সূর্য নিভে যায়নি।
তার আলো আজও ছড়িয়ে আছে রাজপথে, মিছিলে, ছাত্রের চোখে, মায়ের দোয়ায়, আহত বিবেকের প্রতিটি আর্তনাদে।
হাদির শরীর থেমে গেছে, কিন্তু তার আদর্শ থামেনি।
তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তার কথাগুলো আজ হাজারো কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
যে মানুষটি আপস করেনি, যে মানুষটি মাথা নত করেনি,
যে মানুষটি জানত, সত্যের দাম জীবন দিয়েও শোধ করতে হয়
সেই মানুষটিকেই গুলি করে থামাতে চেয়েছিল অন্ধকার।
কিন্তু ইতিহাস বলে, গুলি কখনো আলোকে হত্যা করতে পারে না। হাদিকে হত্যা করা হয়নি, হাদিকে শহীদ করা হয়েছে।
কারণ যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তারা মরলেও হারেন না তারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়ে যায়।
আজ হাসপাতালের বিছানায় নিথর একটি দেহ পড়ে নেই শুধু,
আজ একটি জাতির বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
আজ প্রতিটি সচেতন মানুষের প্রশ্ন? এই দেশ কি তার সাহসী সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে পারে না?
যে রাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, সে রাষ্ট্র একদিন নিজেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়।
হাদি ছিলেন সেই বিরল মানুষদের একজন, যিনি ক্ষমতার কাছে নয়, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতেন, তিনি ছিলেন ভয়হীন,
তিনি ছিলেন স্পষ্ট, তিনি ছিলেন আপসহীন।
এই কারণেই তিনি শত্রুদের চোখে ভয়ংকর ছিলেন,
আর জনতার হৃদয়ে ছিলেন অবিচ্ছেদ্য।
আজ যারা ভাবছে, একজন হাদিকে হত্যা করে একটি আন্দোলন থামিয়ে দেবে, তারা মারাত্মক ভুলের স্বর্গে বাস করছেন,
কারণ হাদি একজন ছিলেন না, হাদি ছিলেন একটি চেতনা।
আর চেতনাকে হত্যা করা যায় না।
আজ শোকের দিনে আমরা কাঁদি,
কিন্তু এই কান্না যেন দুর্বলতার না হয়।
এই কান্না হোক প্রতিজ্ঞার।
হাদির রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।
সূর্য অস্ত গেছে।
কিন্তু আলো রয়ে গেছে।
আর সেই আলোই একদিন
এই অন্ধকার ছিঁড়ে ফেলবে।




























