
আওয়ার টাইমস নিউজ।
জাতীয় ডেস্ক: বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো সময় ঘটতে পারে, এমন ভয়াবহ আশঙ্কা জানাচ্ছেন দেশের ভূ-তত্ত্ববিদরা। শুধু বিজ্ঞানীরা নন, সতর্ক করে আসছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরও। তাদের মতে, দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূগাঠামোর কারণেই বাংলাদেশ বর্তমানে একটি বিপজ্জনক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ তিনটি বড় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত—ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা প্লেট। এসব প্লেটের সংঘর্ষের ফলে দেশের নিচে ভূমিকম্প সৃষ্টিকারী শক্তি জমে উঠছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলগুলো ভয়াবহ রকমের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, যদি মাত্র ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ঢাকায় আঘাত হানে, তবে মাত্র এক মিনিটেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে রাজধানী। ধসে পড়তে পারে হাজার হাজার ভবন, মৃত্যু হতে পারে লাখো মানুষের।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় গড়ে প্রতি এক বর্গকিলোমিটারে রয়েছে প্রায় ৪৯ হাজারের বেশি জনসংখ্যা। এই উচ্চ ঘনত্ব এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এমন একটি ভূমিকম্প ঘটলে ৩ কোটি টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ তৈরি হতে পারে, যা উদ্ধার অভিযানের জন্য বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সাম্প্রতিক সময়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্চ ২০২৫-এ মিয়ানমারে আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছিল বাংলাদেশেও। এছাড়া জুলাই মাসেও ঢাকার আশপাশে ৩.৩ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মৃদু ভূমিকম্প আসন্ন বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। তাই এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ভূমিকম্প প্রতিরোধে শুধু ভবন নির্মাণ কোড মানা নয়, জনসচেতনতাই হতে পারে জীবন বাঁচানোর প্রধান উপায়।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, নিজ নিজ বাসস্থান ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা পরীক্ষা করুন। ভারী আসবাব সুরক্ষিতভাবে স্থাপন করুন এবং পরিবারের সবাইকে ভূমিকম্পকালীন করণীয়গুলো শিখিয়ে রাখুন। প্রতিটি ভবনে জরুরি প্রস্থানপথ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ও উচ্চ ভবনগুলোতে নিয়মিত মহড়া চালু করার কথাও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ যেহেতু ভূমিকম্প রোধ করতে পারে না, তাই প্রস্তুতি ও সচেতনতাই পারে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে। আর এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, প্রতিটি নাগরিকের।
সূত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (www.bmd.gov.bd)




























