
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলাম জীবন ডেস্ক: আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আমাদের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত একটি নীরব ও অদৃশ্য আগুন জ্বলে উঠছে, অশ্লীলতা নামের এক ভয়ঙ্কর আগুন। এই আগুন কোনো বাহ্যিক আগুন নয়, এটি হৃদয়ের পবিত্রতা, চরিত্রের সৌন্দর্য, সমাজের মেরুদণ্ড একে একে ছাই করে দিচ্ছে।
মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির পর্দা থেকে শুরু করে গানের লিরিক্স, নাটক-সিনেমার দৃশ্যপট, সবখানে এখন ‘অশ্লীলতা’ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই আগুন এখন শুধু চোখেই নয়, মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে মানব মনকে বিষাক্ত করছে। একদিক থেকে দেখতে অবাস্তব, কিন্তু বাস্তবতায় এটি ভয়াবহ এক ‘মনোবৈজ্ঞানিক রোগ’।
🧠 আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও আজ প্রমাণ করছে,
পর্নোগ্রাফি আসক্তি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারদের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, একাকীত্ব ও আত্মঘাতী প্রবণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন মন বিষাক্ত হয়, তখন ইমান দুর্বল হয়, আত্মবিশ্বাস লুপ্ত হয়, এবং মানুষ গুনাহের সাগরে ডুবে যায়।
এই রোগ শুধু ব্যক্তিকে নয়, পরিবার ও জাতিকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানসিক অবসাদ, পারিবারিক টুকরো টুকরো হওয়া, নতুন নতুন যৌনরোগের বিস্তার—সবই এই অশ্লীলতার ভয়ঙ্কর ফলাফল।
”পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا﴾
(সূরা আল-ইসরা: ৩২)
অর্থ: “তোমরা ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেয়ো না; নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ।”
এখানে ‘ধারে-কাছেও যেয়ো না’ বলার মাধ্যমে প্রতিটি ধাপ থেকে বিরত থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে—চোখের দৃষ্টি, কথাবার্তা, মনোভাব, হাতের আচরণ—সবই সামিল।
” রাসূল ﷺ-এর গর্জন
নবী মুহাম্মাদ ﷺ বলেন,
«الْعَيْنَانِ تَزْنِيَانِ وَزِنَاهُمَا النَّظَرُ»
(সহীহ মুসলিম)
অর্থ: “চোখও ব্যভিচার করে, আর তার ব্যভিচার হলো (হারাম) দৃষ্টিপাত।”
চোখের মাধ্যমে অশ্লীল দৃশ্য দেখা মানে নিজেকে ধ্বংসের সোপান বানানো। এটা শুধু দুনিয়ার নয়, আখিরাতেরও এক ভয়ংকর গুনাহ।
সমাজ ও ব্যক্তির ধ্বংসযজ্ঞ!
রাসূল ﷺ আরো বলেন,
“যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের মাঝে এমন রোগ প্রেরণ করেন যা আগে দেখা যায়নি।”
(ইবনে মাজাহ)
বর্তমান যুগের মানসিক রোগ, যৌননির্ভর রোগ, পারিবারিক টানাপোড়েন, এসবই আল্লাহর সতর্ক সংকেত।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানের কথা।
মানুষের মস্তিষ্কে দুঃখ, আনন্দ, প্রেম, ঘৃণা—সব স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু যখন আমরা অশ্লীলতা দেখব, শুনব বা ভাবব, তখন মস্তিষ্কের ‘ডোপামিন’ নামক রাসায়নিক বেড়ে যায়। এর অতিরিক্ত সঞ্চয় আসক্তি সৃষ্টি করে, যা হৃদয় ও মস্তিষ্ককে দূর্বল করে ফেলে।
সুস্থ মস্তিষ্ক এবং ইমান একে অপরের সহায়ক। কিন্তু অশ্লীলতা ইমানকে ক্ষুণ্ন করে, এবং মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাধি জন্ম দেয়, যা আত্মহত্যা ও মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।
আল্লাহর গজব ও লানত।
রাসূল ﷺ বলেন…..
“আল্লাহ সেই পুরুষ ও নারীদের উপর লানত করেন যারা অশ্লীলতা ছড়ায় এবং পর্দা ভেঙে ফেলে।”
(আহমদ, তাবারানী)
যারা সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ায়, তারা আল্লাহর ক্রোধের আওতায়।
সমাধান ও আহ্বান
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা,
আজকে আমাদের দায়িত্ব হলো নিজেদের দৃষ্টি, মন এবং মনোভাবকে সুরক্ষিত রাখা।
১) সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার বন্ধ করা
২) সন্তানদের রক্ষা করা
৩)নিজের ইমান ও তাওহীদকে মজবুত করা
৪) আল্লাহর নিকট কাঁদতে কাঁদতে তওবা করা
মনে রাখবেন, অশ্লীলতা শুধু পাপ নয়, এটি এক ভয়ঙ্কর রোগ যা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
আজও ফেরার দরজা খোলা, আল্লাহ ক্ষমাশীল।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত, নিজেকে ও সমাজকে এই আগুন থেকে বাঁচানো।
আসুন, আল্লাহর নূরে পথ চলি, হৃদয়কে পরিষ্কার করি, সমাজকে পবিত্রতার বুকে তুলে ধরি।