
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আবারও প্রাণ হারালেন ফিলিস্তিনিরা। সোমবার (৯ জুন) দক্ষিণ রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে গোলাগুলিতে কমপক্ষে ৬ জন নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান—এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি বাহিনীর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরাও গুলি চালিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের বেশে মুখোশ পরে হঠাৎ গুলি চালিয়ে দেয়। অনেকে সন্দেহ করছেন, এসব বন্দুকধারীরা হয়তো ইসরায়েলের পক্ষেই কাজ করেছে। কারণ, গোলাগুলি শেষে তারা ইসরায়েলি সামরিক এলাকার দিকেই ফিরে যায়।
জিএইচএফ বলছে, তাল আল-সুলতানে তারা কোনও ত্রাণ বিতরণই করেনি ওইদিন। তবে ফেসবুক পোস্টে স্বীকার করেছে, “জনতার বিশৃঙ্খলার কারণে” কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জন অ্যাক্রি জানান, গত দুই সপ্তাহে তারা ১ কোটি ১০ লাখের বেশি খাবার বিতরণ করেছে। তবে তাল আল-সুলতানে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
প্রত্যক্ষদর্শী হিশাম সাঈদ জানান, তিনি একটি ত্রাণ বক্স নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনই মুখ ঢাকা একদল যুবক হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে। এমনকি যারা বক্স নিয়ে ফিরছিল, তাদের দিকেও গুলি ছোঁড়া হয়। মোহাম্মদ সাকাউত বলেন, “আমার পাশেই থাকা কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি নিজে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।”
এমন দৃশ্য খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালে দেখা গেছে। মোহাম্মদ কাবাগা নামে এক আহত ব্যক্তি বলেন, “তারা আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেই গুলি ছোঁড়ে। আমি নিজের গায়ে গুলির আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যাই।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তবে পূর্বের ঘটনার মতো এবারও তারা দাবি করছে, “সন্দেহভাজনদের ওপরই গুলি চালানো হয়েছে যারা সতর্কতা উপেক্ষা করেছিল।”
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত সহায়তা বিতরণের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন স্থান থেকে হাসপাতালগুলোতে ১২৭ জনের মরদেহ এবং ১,২৮৭ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এতে জাতিসংঘকে বাইপাস করা হয়েছে। এ কারণে অনেক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলছে। তাদের দাবি, এটি মানবিক সহায়তার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, এই পদ্ধতিতে হামাসের সহায়তা চুরি ঠেকানো সম্ভব হবে। কিন্তু হামাস বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৯২৭ জন, জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।