
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের একটি প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ওই প্রতিবেদনটিতে স্বৈরাচার খ্যাত হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক অনিয়ম, দুর্নীতি, এবং আর্থিক কারচুপির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদন, যার শিরোনাম “ডিসেকশন অফ এ ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ”, শিগগিরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
হাসিনার শাসনামলে অর্থ পাচারের ভয়াবতা সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। গত এক দশকে হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে চারটি এমআরটি-৬ প্রকল্প নির্মাণ করা যেত।
ক্ষমতচ্যুত সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাজেট বারবার বাড়ানোর চিত্র প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গড়ে ৭০ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়পড়তা পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছে। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার নষ্ট হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক প্রভাবের চিত্রও উঠে এসেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণ প্রদানের ফলে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা গভীরতর হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, তা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হতো।
ওগ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারের দেওয়া কর অব্যাহতি জিডিপির ৬ শতাংশ সমান। এটি অর্ধেকে কমানো গেলে শিক্ষা খাতে বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেত।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিবেদনের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং আর্থিক কারচুপির যে চিত্র আমরা দেখেছি, তা সত্যিই আতঙ্কজনক। এটি ভয়ের রাজত্ব ছিল, যেখানে আমাদের গরিব মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুণ্ঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির এই চিত্রের পরও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো নীরব ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নীতিগত সংস্কার জরুরি। শ্বেতপত্রটিকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনামলকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দুর্নীতি ও অপচয়ের পরিমাণ এত বেশি যে, তা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। শ্বেতপত্রটি প্রকাশের পর দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবং এটি দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক চিত্র রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।