আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: ইসলামের ইতিহাসে উহুদের যুদ্ধ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই যুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী যোদ্ধা হিসেবে নিজের সাহসিকতার সাক্ষী রাখেন হজরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা:)। তাঁর অসাধারণ বীরত্ব ও আত্মত্যাগ মুসলিম নারীদের জন্য একটি প্রেরণার প্রতীক হয়ে রয়েছে।
মক্কার কাফিররা বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মদিনার ওপর আক্রমণ চালায়। নবীজি (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এই যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যুদ্ধ শুরুর দিকে মুসলমানরা এগিয়ে থাকলেও পরে যুদ্ধক্ষেত্রের শৃঙ্খলা ভেঙে গেলে কাফিররা পাল্টা আক্রমণ চালায়।
হজরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা:), যিনি “উম্মে আম্মারা” নামেও পরিচিত, প্রথমে যুদ্ধে একজন সেবিকা হিসেবে অংশ নেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আহতদের সেবা ও পানির ব্যবস্থা করা। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে তিনি তরবারি তুলে নেন এবং নবীজি (সা.)-এর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কাফিররা যখন নবীজি (সা.)-কে আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়, তখন হজরত নুসাইবা (রা.) নিজের শরীর দিয়ে নবীজিকে ঢেকে দেন। তিনি কাফিরদের আঘাত প্রতিহত করতে তরবারি ও তীরধনুক ব্যবহার করেন। তাঁর সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কারণে নবীজি (সা.) একাধিকবার তাঁর জন্য দোয়া করেন এবং বলেন, “উহুদের যুদ্ধে নুসাইবার মতো আর কোনো বীর যোদ্ধাকে আমি দেখিনি।
এই যুদ্ধে হজরত নুসাইবা (রা.) গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁর শরীরে ১২টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন ছিল। একবার কাফিরদের একজন সৈনিক নবীজিকে আঘাত করতে গেলে, তিনি সেই সৈনিকের পথ রোধ করেন এবং পাল্টা আক্রমণ চালান। এতে তিনি নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হন, কিন্তু থেমে যাননি।
উহুদের যুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য হজরত নুসাইবা (রা.)-কে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। নবীজি (সা.) তার এই আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাঁর পরিবারের জন্য বরকতের দোয়া করেন।
হজরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা:)-এর এই অসাধারণ বীরত্ব ইসলামের নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইসলামের সেবায় নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাঁর আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা শুধু উহুদের যুদ্ধেই নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।