
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রিত থাকার পর আবারও চোখ রাঙাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে ভাইরাসটির একাধিক নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরীক্ষা কিট নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকলেও কিট নেই। তবে কিট শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠকে কিট দ্রুত সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কড়া স্ক্রিনিং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে ভারতফেরত যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এবারের ভ্যারিয়েন্ট আরও দ্রুত ছড়াতে পারে এবং আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন ব্যক্তিরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৭৪৭ জন আক্রান্ত এবং মোট ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও উচ্চ ঝুঁকির মুখে।
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, “করোনা একবার হয়েছে বলে কেউ নিশ্চিন্তে থাকবেন না। মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলাই এখন একমাত্র উপায়।”
নিপসম-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম ছারোয়ার বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ নতুন ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। তাই শুধু টিকা নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানাটাই এখন মূল প্রতিরোধ।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে ফাইজারের তৈরি প্রায় ৩১ লাখ ডোজ টিকা মজুত আছে, যার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এই টিকার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট। অর্থাৎ সময়সীমা অতিক্রমের আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ও ছয় মাস আগে টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের আবারও টিকা দেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, “এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম চলছে, ফলে হাঁচি-কাশির মধ্যে করোনার লক্ষণ আলাদা করে বোঝা কঠিন। জনসমাগম এলাকায় করোনা যাতে না ছড়ায় সে জন্য বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েই ব্যবস্থা নিতে হবে। সব রোগী ঢাকায় আসলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।”
তাঁর মতে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়বে। অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে পারে। কারণ বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল দিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
করোনা প্রতিরোধে করণীয়:
স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে হেলথ ডেস্ক সক্রিয় রাখা
থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারে তাপমাত্রা পরীক্ষা
পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস মজুত রাখা
জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার জোরদার করা
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতসহ সংক্রমিত দেশে ভ্রমণ এড়িয়ে চলা
সবার জন্য পরামর্শ: ১. সাবান দিয়ে নিয়মিত ও অন্তত ২৩ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া
২. মাস্ক ব্যবহার করা
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা
৪. অপরিষ্কার হাতে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ না করা
৫. হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা
সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে করণীয়:
অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন
মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন
রোগীকে মাস্ক পরতে বলুন
প্রয়োজনে আইইডিসিআর হটলাইন ০১৪০১-১৯৬২৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করুন