
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ও ‘ডেভিডস স্লিং’-এর দুর্ভেদ্য বলয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ভাঙন ধরাতে সক্ষম হয়েছে ইরান। শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে শুরু হওয়া ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ অভিযানে শত শত ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র একযোগে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই হামলায় ইসরায়েলের আয়রন ডোম ব্যবস্থা একাধিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তেল আবিব, হাইফা এবং নেভাতিম ঘাঁটির কাছাকাছি এলাকায় অন্তত ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। এতে সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি বেসামরিক স্থাপনাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেহরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল যেহেতু তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, তাই এই প্রতিশোধমূলক হামলা ছিল আত্মরক্ষার অংশ। হামলায় ব্যবহৃত হাইপারসনিক মিসাইল ‘ফাতেহ‑৩৬০’ এবং ‘খায়বারশিকান’—এই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র এতটাই গতিসম্পন্ন ছিল যে, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা তা শনাক্তের আগেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার জন্য একটি বড় সতর্ক সংকেত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মহলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলা প্রমাণ করেছে, কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই শতভাগ নিরাপদ নয়। ইসরায়েলের ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বরাতে জানানো হয়েছে, অন্তত তিনটি সামরিক কমান্ড সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২৮ জন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বলেছে, “আমরা যা করেছি তা শুধুই শুরু। যদি ইসরায়েল আবারো আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত করে, তাহলে তার জবাব হবে আরও ভয়াবহ।” অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, “আমরা অপারেশন রাইজিং লায়নের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করব।”
বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, কারণ বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকই বলছেন—এই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে হয়তো ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ সুর বেজে উঠেছে। রাশিয়ার এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সাফ জানিয়েছেন, “ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন আর সীমিত পর্যায়ে নেই। এটি এখন বিশ্ব পরাশক্তিদের সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ ও পশ্চিমা জোটের সক্রিয়তা গোটা পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।