
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: বর্তমান সমাজে ব্যাংক ঋণ একটি সাধারণ বিষয় হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কতটা ভয়াবহ, তা অনেকেই জানেন না। অধিকাংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদভিত্তিক হওয়ায় একজন মুসলমান অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুদের লেনদেনে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ কুরআন ও হাদীসে সুদ গ্রহণ, প্রদান, এমনকি এর সঙ্গে সামান্য সম্পৃক্ততাও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুরআনের বাণী ও তার অর্থ:
আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُولِهِ
“তোমরা যদি (সুদ পরিহার করে) তা না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও।”
সুরা আল-বাকারা: ২৭৯
এই আয়াতের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা খুবই কঠিন হুঁশিয়ারি। এটি বোঝায়, সুদ গ্রহণ এমন এক ভয়ানক গুনাহ, যা আল্লাহর সরাসরি গজব ডেকে আনে। এটি শুধু হারাম নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার শামিল।
সুদের সম্পদ ধ্বংস হয়, দানের সম্পদ বৃদ্ধি পায়:
يَمْحَقُ اللّٰهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ
“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বৃদ্ধি করেন।”
সুরা আল-বাকারা: ২৭৬
এই আয়াতের ব্যাখ্যা:
সুদে অর্জিত অর্থ হয়তো সংখ্যায় বাড়ে, কিন্তু তাতে বরকত থাকে না। আল্লাহ তার রিজিক থেকে বরকত উঠিয়ে নেন। অন্যদিকে, হালাল ও সদকা করা অর্থে বরকত ও শান্তি নেমে আসে।
কিয়ামতের দিন সুদখোরেরা বিকৃতভাবে উঠবে:
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের দিনে এমনভাবে উঠবে, যেমন দাঁড়ায় সেই ব্যক্তি যাকে শয়তান আছর করে পাগল বানিয়ে দেয়।”
সুরা আল-বাকারা: ২৭৫
এই আয়াতের ব্যাখ্যা:
এটি বোঝায়, সুদখোরদের কিয়ামতে বিকৃত, অপমানজনক ও ভীতিকর অবস্থায় তোলা হবে। এটা তাদের গুনাহের বহিঃপ্রকাশ — দুনিয়ায় তারা যেমন গর্ব করে হারাম অর্থ খেতো, আখিরাতে তেমনই লাঞ্ছনার শিকার হবে।
হাদীস ও তার ব্যাখ্যা।
সুদভোগী, দাতা, লেখক, সাক্ষী — সবাই সমান অপরাধী:
لَعَنَ رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
“রসূলুল্লাহ ﷺ সুদ গ্রহণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীদের উপর লানত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী।”
সহীহ মুসলিম: ১৫৯৮
এই হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইসলাম শুধু সুদগ্রহীকে নয়, সুদের সাথে যুক্ত প্রত্যেককে সমান গুনাহগার মনে করে। অর্থাৎ কেউ যদি বলে, ‘আমি শুধু লিখে দিলাম বা সাক্ষী দিলাম’, সেটাও আল্লাহর কাছে মারাত্মক অপরাধ।
সুদ গ্রহণ ব্যভিচারের চেয়েও ভয়াবহ:
دِرْهَمٌ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ، أَشَدُّ مِنْ سِتٍّ وَثَلَاثِينَ زَنْيَةً
“যে ব্যক্তি এক দিরহাম সুদ খায় জেনেশুনে, তার এই গুনাহ ৩৬ বার ব্যভিচারের চেয়েও গুরুতর।”
মুসনাদে আহমদ: ২১৯৪٢
এই হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে ‘ব্যভিচার’ এমন এক জঘন্য গুনাহ যার শাস্তি কঠিন। কিন্তু সুদের মাত্র এক দিরহাম নেওয়াও তার চেয়ে বহু গুণ বড় অপরাধ — এই তুলনা বোঝায় সুদের ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক।
সুদ সম্পদ বাড়ালেও শেষপরিণতি ধ্বংস:
إِنَّ الرِّبَا لَا يَزِيدُ فِي الْمَالِ، وَلَوْ كَانَ كَثِيرًا، وَإِنَّ عَاقِبَتَهُ إِلَى قُلٍّ
“নিশ্চয়ই সুদ মাল-সম্পদ বাড়ায় না, যদিও তা সংখ্যায় বেশি হয়। বরং তার পরিণতি ধ্বংস।”
তাবারানি
এই হাদীসের ব্যাখ্যা:
সুদে ধন-সম্পদ বাড়ার মতো মনে হলেও সেটি ক্ষণস্থায়ী, বরকতহীন ও অশান্তিকর। আল্লাহ সেই সম্পদকে ধ্বংস করে দেন — হয় দুনিয়ায়, না হয় আখিরাতে।