
আওয়ার টাইমস নিউজ।
স্বাস্থ্য: নাক বন্ধ থাকা অনেকেই সাধারণ সর্দি-জ্বরের সমস্যা বলে মনে করলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি সবসময় এতটা সাধারণ নয়। নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদি নাক বন্ধ থাকা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—বিশেষ করে মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, নাক বন্ধ থাকলে আমরা নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে বাধ্য হই। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। যার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মনোযোগে ঘাটতি, মাথা ঘোরা, এমনকি ঘন ঘন মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নাকের মাধ্যমে প্রবেশ করা বাতাস শোধিত, উষ্ণ এবং আর্দ্র হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। কিন্তু মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে ধুলাবালি, জীবাণু এবং ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়। এতে যেমন ফুসফুস আক্রান্ত হয়, তেমনি সারা শরীরের অক্সিজেন সরবরাহে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। মস্তিষ্ক এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাক বন্ধ থাকার সম্ভাব্য কারণসমূহ:
সাইনোসাইটিস বা সাইনাসে সংক্রমণ
অ্যালার্জি
নাকের পলিপ বা টিউমার
ধুলাবালি ও পরিবেশ দূষণ
ঠান্ডাজনিত ইনফেকশন
শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাক বন্ধ থাকলে কেবল তাৎক্ষণিক অস্বস্তিই নয়, দীর্ঘমেয়াদে এটি ঘুমের ব্যাঘাত, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণও হতে পারে।
নাক বন্ধ প্রতিরোধে করণীয়:
নিয়মিত নাক পরিষ্কার রাখা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
ঠান্ডা-ধুলাবালি থেকে নিজেকে রক্ষা করা
গরম পানির ভাপ নেওয়া (স্টিম ইনহেলেশন)
প্রচুর পানি পান করা এবং আর্দ্রতা বজায় রাখা
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন বা ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যদি কেউ তিন দিনের বেশি সময় ধরে নাক বন্ধ অনুভব করেন কিংবা ঘন ঘন এ সমস্যা হয়, তবে অবশ্যই একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের (কান-নাক-গলা) পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অবহেলা নয়, সচেতনতা হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। নাক বন্ধ থাকলে তাৎক্ষণিক স্বস্তির জন্য না ভেবে, ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াই শ্রেয়।