
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলাম ডেস্কঃ ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে মানুষ কেবল ভোগ-বিলাসের জন্য আসেনি। বরং প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি মহান লক্ষ্য, একটি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব নিহিত, আর তা হলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত, ইসলামের দাওয়াত এবং মানবতার খেদমত। কুরআন-সুন্নাহ ও সমাজবিজ্ঞানের আলোকে আমরা যদি এই উদ্দেশ্য অনুধাবন করি, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন এক মহিমান্বিত রূপ পাবে।
পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষের প্রেরণের উদ্দেশ্য:
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
“وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ”
(সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
“আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।”
ইবাদত বলতে শুধু নামাজ, রোজা নয়; বরং মানুষের কল্যাণে কাজ করা, ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে অংশগ্রহণ করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ:
হাদীস শরীফে নবী মুহাম্মদ সাঃ বলেন,
“لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ”
(সূরা আল আহযাব: ২১)
“তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”
তিনি কেবল একজন নবী নন; ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক, এতিমদের অভিভাবক, অসহায়দের সহায়ক এবং মানবতার ছায়াতরু। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই সমাজে উপকারি হওয়া উচিত।
হাদীসের আলোকে মানবতার সেবা।
নবী মুহাম্মদ সাঃ আরও বলেন,
“خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ”
(মু’আজ্জামুল আওসাত)
“মানুষের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ, যে অন্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারি।”
এই হাদীস আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত মু’মিন সেই, যিনি শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের সকল মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।
সমাজবিজ্ঞান বলছে—একটি জাতি তখনই উন্নতির চূড়ায় পৌঁছায়, যখন তারা পরস্পরের দায়িত্ব অনুভব করে, সমাজের দুর্বল শ্রেণীর পাশে দাঁড়ায় এবং নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে জীবনযাপন করে। ইসলাম বহু পূর্বেই এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য, সহানুভূতি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম ভিত্তি।
বর্তমানে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অবহেলা, নিঃসঙ্গতা ও সামাজিক বৈষম্যে জর্জরিত লাখো মানুষ। যদি আমরা এই নিপীড়িতদের পাশে না দাঁড়াই, তবে আমাদের ঈমান পূর্ণতা পাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ”
(বুখারী ও মুসলিম)
“তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তেমনটি চায়, যেমনটি সে নিজের জন্য চায়।”
আমরা যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের মুসলমান মনে করি, তবে দায়িত্ব শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমাজের প্রতিটি সমস্যায় সহানুভূতির হাত বাড়ানো, ইসলামের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং অসহায় মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালানোই আমাদের প্রধান কর্তব্য।
আসুন, আমরা সবাই মিলে মানবতার খেদমতের এই মহান যাত্রায় অংশ নিই, যা হবে আমাদের দুনিয়ার গৌরব, আখিরাতের মুক্তির মাধ্যম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এই কথাগুলোর উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন।
লেখকঃ হুসাইন আল আজাদ ইবনে নোয়াব আলী।
চেয়ারম্যান MQ Global Foundation