সর্বশেষ
দেশজুড়ে আবারো ভূকম্পন: রাজধানীতে ৩.৭ মাত্রার কম্পনে আতঙ্ক, দিনের শুরুতেও কেঁপেছিল পলাশ
২৪ ঘন্টার মধ্যেই ভূকম্পে ক্ষেপে উঠল সাভার বাইপাইল!
বরিশালে ওয়াজ মাহফিলে বিএনপি নেতার বক্তব্য ঘিরে হট্টগোল
শততম টেস্টে সেঞ্চুরির পর মুশফিকের ফিফটি, ডিক্লেয়ার করে আইরিশদের ৫০৪ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ড. ইউনূস-তোবগে বৈঠক
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা: সামনের দিনে বড় কম্পনের শঙ্কা বাড়ছে
বাংলাদেশ কাঁপিয়ে গেল ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০, দেশজুড়ে শোক-আতঙ্ক
অবিশ্বাস্য ফিচার নিয়ে বাজার কাপাতে আসছে Motorola Moto G85 5G
ভূমিকম্পে ৪ জেলায় নিহত ৭, আহত দুই শতাধিক, সারা দেশে ফাটল, আতঙ্কে মানুষ
ভূমিকম্পের মাধ্যমে আল্লাহ যে জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
ভূমিকম্পে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত, পুরান ঢাকায় নিহত ৩
ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ: হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট
ভূমিকম্পে পুরান ঢাকায় ভবনের অংশ ধসে ৩ পথচারীর মৃত্যু
ভূমিকম্পের সময় যে দোয়া পড়া জরুরি, জেনে নিন ইসলামের নির্দেশনা

এনসিপির নতুন বাংলাদেশের ইশতেহারে নতুন ইতিহাস তৈরীর হাতছানি

Our Times News

আওয়ার টাইমস নিউজ।

নিউজ ডেস্ক: এনসিপির নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার: বৃহৎ ১ম ভাগ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর এক বছরে বাংলাদেশ যে পথে যাওয়ার কথা ছিল, সে পথে যায়নি। তিনি দায় ও ব্যর্থতা স্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।

রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় নাহিদ ইসলাম বলেন,“আজ থেকে এক বছর আগে এই শহীদ মিনারেই আমরা শপথ নিয়েছিলাম এ দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করব। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করেছেন এবং দেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে এনেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আজ আবারও এই শহীদ মিনার থেকে আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন, ঐতিহাসিক ২৪ দফাকে বাস্তব রূপ দিয়ে আমাদের ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গড়ে তুলি, যেখানে সব নাগরিকের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ বাস্তব হবে।”

এরপর তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন, যার মধ্যে রয়েছে:
১. নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক
২. জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার
৩. গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার
৪. ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার
৫. সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন
৬. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
৭. গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার
৮. স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ
৯. সার্বজনীন স্বাস্থ্য
১০. জাতিগঠনে শিক্ষানীতি
১১. গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব
১২. ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা
১৩. নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন
১৪. মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি
১৫. তারুণ্য ও কর্মসংস্থান
১৬. বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি
১৭. টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব
১৮. শ্রমিক-কৃষকের অধিকার
১৯. জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা
২০. নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা
২১. জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা
২২. প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার
২৩. বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি
২৪. জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল
দফাগুলোর ব্যাখ্যা (১ম-৪র্থ পর্যন্ত):

১.নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক
উপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়া হবে। প্রথম অঙ্গীকার— গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। এই সংবিধান একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলুপ্ত করে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। রাষ্ট্র মানুষের জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুত থাকবে। আইনি কাঠামোতে আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার সঠিক ভারসাম্য থাকবে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিও নিশ্চিত করা হবে।

২.জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার
এই দেশের মানুষের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার, এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিতে হবে। জুলাইয়ের গণহত্যা, শাপলা হত্যাকাণ্ড, বিডিআর বিদ্রোহ, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা— সব মানবতা বিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন দেওয়া হবে। জুলাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকবে।

৩.গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার
একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পক্ষপাতহীন, মানবিক ও গণমুখী হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেগুলোকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা হবে। জনগণ শুধু ভোটের দিন ক্ষমতার উৎস হবেনা— প্রতিটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। নির্বাচন কমিশন আইন ও গঠন প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হবে। নির্বাচনী ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে, কালো টাকা ও অনৈতিক প্রভাব কমাতে সৎ প্রার্থীদের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

৪. ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার
বিচারবিভাগ স্বাধীন ও শক্তিশালী হবে। ঔপনিবেশিক আমলের সকল আইনকে যুগোপযোগী করা হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো আইন প্রণয়ন হবে না। বিচার বিভাগের আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। মামলার জট কমাতে আদালতের সংখ্যা বাড়বে, নথিপত্র ডিজিটাল হবে, অনলাইনে মামলার অগ্রগতি দেখা যাবে। দেওয়ানী মামলায় ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য নতুন আইন হবে। গরিবদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা বাড়ানো হবে। কিশোর সংশোধনাগারগুলো মানবিকীকরণ ও পুনর্বাসনমুখী হবে।

বিসমিল্লাহ — নিচে দ্বিতীয় ভাগ সাজিয়ে দিলাম, প্রথম ভাগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, শব্দ ও গঠন প্রাঞ্জল রেখেছি যাতে তুমি সহজেই এডিট করতে পারো।

গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার

আমরা এমন এক ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে চাই, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান হবে নিরপেক্ষ, মানবিক এবং সর্বোপরি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। জনসেবা হবে তাদের মূল দায়িত্ব। এজন্য সাংবিধানিক ও আইনগত সব জবাবদিহি কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা হবে যাতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা যায়।
আমরা চাই এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণ কেবল ভোটের দিন ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে না, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার সব পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন আইনের কাঠামো সংস্কার করবো, কমিশন গঠনের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনবো এবং নির্বাচন ব্যয়ের বড় অংশ রাষ্ট্র বহন করবে, যাতে কালো টাকার প্রভাব কমে যায়। এতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়বে।

ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার

আমরা এমন এক স্বাধীন বিচারব্যবস্থা চাই, যা ক্ষমতাবানদের পক্ষে অন্ধ নয় — বরং সাধারণ মানুষ যেন তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়। এজন্য ঔপনিবেশিক আমলের বহু পুরনো আইনগুলোকে যুগোপযোগী করা হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী।

বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয়কে আর্থিকভাবে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে এবং মামলা জট কমাতে বিচারক ও আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। মামলার নথিপত্র ডিজিটাল করে অগ্রগতি অনলাইনে ট্র্যাক করার ব্যবস্থা থাকবে। দেওয়ানি দায়ে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়ে আলাদা আইনি কাঠামো তৈরি হবে।

মানহানি মামলায় শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই প্রতিকার চাইতে পারবেন — এটি নিশ্চিত করা হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তার সুযোগ আরও বাড়ানো হবে।

কিশোর সংশোধনাগারগুলোর পরিবেশ মানবিক করা হবে, যাতে সংশোধনের পর তারা সমাজে মর্যাদার সঙ্গে ফিরে আসতে পারে।

সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন

দীর্ঘদিন ধরে দেশের আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে জনগণের উপর শোষণের হাতিয়ার বানানো হয়েছে। আমরা প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো পুরোপুরি বন্ধ করবো।

আমলাতন্ত্র হবে দক্ষ, স্বচ্ছ এবং সেবামুখী — এজন্য তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের প্রশাসনে অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে। নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি সব ক্ষেত্রে মেধা ও সততা হবে একমাত্র মানদণ্ড। সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে।

কাগজপত্র, সময় এবং অফিসে সরাসরি হাজিরা কমাতে ডিজিটাল গভার্ন্যান্স চালু হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বন্ধে দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির বিধান হবে।

যে কোনো দপ্তরের দুর্নীতি ফাঁস করলে সৎ কর্মীদের সুরক্ষায় Whistleblower Protection আইন প্রণয়ন হবে। একইসঙ্গে সমাজ ও পরিবারে দুর্নীতি বিরোধী মূল্যবোধ গড়ে তুলতে শিক্ষায় পরিবর্তন আনা হবে, স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু হবে।

জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে কোনো নাগরিককে বিনা কারণে ভয়ভীতি দেখিয়ে তুলে নেওয়া হবে না। ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন যুগোপযোগী করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হবে মানবাধিকার রক্ষক, জনগণের সেবক। এদের বদলি ও পদায়নে স্বচ্ছতা আনতে স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে।

যেকোনো গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট বা নির্দিষ্ট কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে এবং গ্রেফতারকারী পুলিশ সদস্যের পদবি-পরিচয় স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

সব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের সময় ইউনিফর্মে থাকবে, অযথা সিভিল ড্রেসে অভিযান বন্ধ হবে। প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের আওতায় আনা হবে, যাতে অপব্যবহার রোধ হয়।
কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার হবে, মানবাধিকার ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হবে। সহিংস অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স থাকবে।
র‌্যাব বিলুপ্ত করে রাজনৈতিক স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা অপব্যবহার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে।

আলহামদুলিল্লাহ — ঠিক আছে বন্ধু! নিচে তৃতীয় ভাগ সাজিয়ে দিচ্ছি, দ্বিতীয় ভাগের সাথে ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে, ভাষা সামঞ্জস্য বজায় রেখে:

✦ তৃতীয় ভাগ

গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার

শহরমুখী জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শহরের উপর চাপ বেড়েছে, গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে। আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে গ্রামের মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে, তবুও গ্রামের স্বকীয়তা থাকবে অটুট।
গ্রামে উৎপাদন ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে স্বনির্ভর গ্রাম গড়ে তোলা হবে। স্থানীয় শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে গ্রাম পার্লামেন্ট চালু করা হবে — স্থানীয় সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ন তদারকির ক্ষমতা এদের হাতেই থাকবে।
স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী হবে, বিকেন্দ্রীকরণ হবে বাস্তবায়নযোগ্য। সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা ফেরত দেওয়া হবে।
স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন ও সরকারি কেনাকাটায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক জবাবদিহিতা বজায় রাখতে ওয়ার্ড সভা, উন্মুক্ত বাজেট সভার মত কাঠামো কার্যকরভাবে চালু থাকবে।
সরকারি সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকারের আওতায় বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে। একটি স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন হবে, যা দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতে কাজ করবে।

স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের প্রাণ। আমরা শতভাগ স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি কাঠামো তৈরি করবো। প্রেস কাউন্সিল হবে কার্যকর ও আধুনিক।
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে একাধিক গণমাধ্যমের মালিকানা কুক্ষিগত হবে না, রাজনৈতিক স্বার্থে সংবাদপত্র ব্যবহার হবে না — গণমাধ্যম হবে জনগণের মুখপাত্র।
গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা শক্তিশালী করতে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হবে। নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় নীতি কাঠামো হবে শক্তিশালী।
ভুয়া সংবাদ, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে সুরক্ষায় রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য

আমরা এমন এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই, যেখানে টাকার অভাবে কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে না। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অ্যাম্বুলেন্সে জরুরি চিকিৎসা শুরু হবে — এজন্য সারাদেশে জিপিএস-চালিত অ্যাম্বুলেন্স ও ডিসপ্যাচ ব্যবস্থা চালু হবে।
ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড (EHR) চালু হবে — প্রতিটি নাগরিকের ইউনিক হেলথ আইডি থাকবে, চিকিৎসা তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত হবে, ভুল চিকিৎসা ও অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বন্ধ হবে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হবে মানসম্মত, নিজ এলাকায় চিকিৎসা পাওয়া সহজ হবে। রেফারেল সিস্টেম কার্যকর হবে যাতে রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন।
স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য কমাতে অঞ্চলভিত্তিক হৃদরোগ, ট্রমা ও বিশেষায়িত কেন্দ্র তৈরি হবে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হবে — আলাদা বাজেট, প্রশিক্ষিত জনবল ও সেবার সম্প্রসারণ নিশ্চিত হবে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ন্যায্য বেতন, ক্যারিয়ার অগ্রগতির সুযোগ, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ থাকবে। কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা বন্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হবে।
দেশের মানুষের জন্য নতুন ও কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবনে জাতীয় বায়োব্যাঙ্ক স্থাপন হবে, যা বিশ্বমানের হবে।

জাতিগঠনে শিক্ষানীতি।

শিক্ষা পণ্য নয়, অধিকার আমরা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই। বিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষায় ভিত্তি মজবুত হবে।

ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার পাশাপাশি নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক গড়াই হবে শিক্ষার লক্ষ্য। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে। উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টি। বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা, সব ধারার শিক্ষার যৌক্তিক সমন্বয় হবে। জাতীয় পাঠ্যক্রম হবে আধুনিক ও সমাজ-অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কর্মমুখী শিক্ষা, নার্সিং শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ হবে আন্তর্জাতিক মানের, যাতে টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়। বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক, অবকাঠামো ও উপকরণ নিশ্চিত হবে। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় পৃথক বেতন কাঠামো ও নীতি প্রণয়ন হবে, শিক্ষকদের অংশগ্রহণ থাকবে নীতি-নির্ধারণে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির প্রভাব নিয়ে গ্রহণযোগ্য নীতি হবে, যাতে একাডেমিক পরিবেশ সুস্থ থাকে।

আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তুলবো। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণায় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করবে।
অ্যারোনটিক্স, মহাকাশ গবেষণা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সেমিকন্ডাক্টর, কোয়ান্টাম টেকনোলজি, নিউক্লিয়ার সায়েন্স, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি-এসব ক্ষেত্রে বিশ্বমানের ল্যাব স্থাপন হবে।

বিদেশি ল্যাব ও বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা চলবে। কম্পিউটেশনাল গবেষণার জন্য ন্যাশনাল কম্পিউটিং সার্ভার ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কম্পিউটিং ক্লাস্টার তৈরি হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপ্রয়োজনীয় আমলাতন্ত্র বন্ধ হবে, আউটপুট মূল্যায়নে কমিশন গঠিত হবে। তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা রক্ষায়ও আলাদা কমিশন থাকবে।

ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা

আমরা ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ধর্মীয় পরিচয়কে রাজনৈতিক নির্যাতনের হাতিয়ার হতে দেওয়া হবে না।

ইসলাম-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা বা জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান থাকবে। মানবাধিকার কমিশনের অধীনে বিশেষ সেল গঠন হবে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদখলকৃত জমি উদ্ধার, দলিত-হরিজন-তফসিলি সম্প্রদায়ের উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।
সব জাতিসত্তার ভাষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো সক্রিয় হবে, মাতৃভাষায় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশে জাতীয় উৎসব হবে সর্বজনীন।

নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হবে।

উত্তরাধিকারে নারীর সম্পত্তির অধিকার দ্রুত বুঝিয়ে দিতে আইনি সহায়তা থাকবে। চাকরিতে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর হবে, গৃহিণী নারীর অবদান জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।

প্রতিটি থানায় নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সেল ও নারী পুলিশ থাকবে। ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার, ভিকটিমের পরিচয় গোপন রাখা, ব্রেস্টফিডিং ও স্যানিটারি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস ও পিতৃত্বকালীন এক মাস — উভয়ই পূর্ণ বেতনে নিশ্চিত হবে।

নারীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস থাকবে, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ উদ্যোগ থাকবে।

মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি

অর্থনীতি হবে মানুষের মর্যাদাভিত্তিক — শুধু জিডিপি নয়, নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও সেবা উন্নয়নের মূল মানদণ্ড হবে।
বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু ভাতা — সবই নাগরিক অধিকার হবে। পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষদের জন্য পুনর্বাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কাজের সুযোগ নিশ্চিত হবে।
কর কাঠামো হবে ন্যায্য, ধনী-গরিব বৈষম্য কমবে, মধ্যম আয়ের ফাঁদ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা থাকবে।

ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা, ঋণ খেলাপি রোধে একক ক্রেডিট আইডি, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম, পুঁজিবাজার সংস্কার ও সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন হবে।

তারুণ্য ও কর্মসংস্থান

তরুণদের জন্য দেশে ও বিদেশে সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে রপ্তানিমুখী শ্রমঘন শিল্প ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা হবে।
প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ ও স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা থাকবে। জেলাভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক হাব হবে, দ্রুত ইন্টারনেট ও পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম থাকবে।

বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট খাতভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠবে। মাদক ও অপরাধপ্রবণতা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে।

বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি

রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও বিকল্প বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হবে। নতুন খাত চিহ্নিত করে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হবে, যাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি সমান অধিকার, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করে।
গণতন্ত্র, ন্যায়, সুশাসন ও মানবিকতা, এই চার স্তম্ভে দাঁড়িয়ে আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের এই আহ্বানে আমরা সবাইকে একসাথে পথ চলার অনুরোধ করছি।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত