
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহীর তানোর উপজেলার কয়েলের হাট মধ্যপাড়া এলাকায় দুই বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধারে টানা ২৪ ঘণ্টা চেষ্টা করেও কোনো সাফল্য পাওয়া যায়নি। বুধবার দুপুরে পরিত্যক্ত একটি সেমিডিপ নলকূপের খোলা গর্তে পড়ে যাওয়ার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ক্যামেরা ব্যবহার করে ৪২ ফুট গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান করা হলেও শিশুটির অবস্থান শনাক্ত সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় গর্তের পাশেই আরও একটি সমান্তরাল গর্ত খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্ধারকারী দল।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে জানান, গর্তটি প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ফুট গভীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এত গভীর ও সরু নলকূপের গর্তে সরাসরি নামা বা উন্নত যন্ত্র দিয়ে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোনো দেশেই এমন সংকীর্ণ গর্ত থেকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করার প্রযুক্তি নেই। নিরাপত্তা বিবেচনায় গর্তের পাশে সমান্তরালভাবে খনন করে নিচে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এত গভীর গর্তে পৌঁছাতে উন্নত দেশেও ৭৫ থেকে ৭৮ ঘণ্টা সময় লাগে। বাংলাদেশেও সময় বেশি লাগতে পারে, তবে চেষ্টা বন্ধ হবে না।
বুধবার দুপুরে প্রথমে ৩৫ ফুট পর্যন্ত ক্যামেরা নামানো হয়, কিন্তু গর্তের ভেতর খড়, ভেজা মাটি ও আবর্জনা জমে থাকায় নিচে কিছু দেখা যায়নি। পরে আরও উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করে ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হয়, তবুও শিশুটির কোনো অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। সরু গর্তে প্রায়ই ক্যামেরা আটকে যাওয়ায় কাজ বারবার ব্যাহত হচ্ছে। এজন্যই নতুন গর্ত খননকে তারা সবচেয়ে কার্যকর পথ হিসেবে বিবেচনা করছে।
ঘটনার শুরু ছিল বুধবার দুপুরে। সাজিদ তার মায়ের হাত ধরে মাঠের দিকে যাচ্ছিল। মায়ের কোলে ছিল আরেকটি ছোট সন্তান। এক মুহূর্তের জন্য পেছনে তাকাতেই সাজিদ হঠাৎ “মা… মা…” বলে চিৎকার দেয়। ফিরে তাকিয়ে দেখেন, গর্ত থেকে শব্দ আসছে। গর্তের মুখে খড় বিছানো ছিল বলে কোনোভাবেই বোঝা যায়নি সেখানে বিপজ্জনক গভীরতা লুকিয়ে আছে। শিশুটি পা রাখতেই নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তড়িৎ চেষ্টা করেও তাকে তুলতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক বছর আগে জমির মালিক সেচের জন্য সেমিডিপ নলকূপ বসাতে গিয়ে গর্ত খনন করেছিলেন। পানি না পাওয়ায় কাজ অসম্পূর্ণ থেকেই যায়। কোনো সতর্কতা চিহ্ন, বেড়া বা ঢাকনা না দেওয়ায় পুরো বছরই বিপজ্জনক গর্তটি খোলা অবস্থায় ছিল। সেই অবহেলাই আজ একটি শিশুর জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে উপচে পড়া ভিড়। মানুষের উদ্বেগ, আতঙ্ক আর অপেক্ষা—সব মিলিয়ে পরিবেশ ভারী হয়ে আছে। শিশুটির মা রুনা খাতুন বারবার গর্তের দিকে তাকিয়ে আহাজারি করছেন। মাঝে মাঝে সামান্য শব্দ পেলেই তিনি দৌড়ে যাচ্ছেন, হয়তো তার সন্তানকে পাওয়া গেছে এই আশায়।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অনুসন্ধান থামানোর কোনো প্রশ্নই নেই। যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, তারা কাজ চালিয়ে যাবে। দ্বিতীয় গর্ত খননও শুরু হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে নতুন অগ্রগতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।




























