
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ঈদুল আজহার আত্মত্যাগের মহিমাকে শুধু ব্যক্তি বা পরিবারে সীমাবদ্ধ না রেখে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্বের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর কাছে। এমন মানবিক ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী ৭৮ বছর বয়সী ভারতীয় মুসলমান হুসেইন আহমেদালি নলওয়ালা।
নলওয়ালা গত পাঁচ বছর ধরে নিজ অর্থে আফ্রিকার দুর্ভিক্ষপীড়িত মুসলিম দেশ—ইয়েমেন, সোমালিয়া, সুদান ও ইথিওপিয়া-তে কোরবানির পশু জবাই করে দরিদ্র মানুষের মাঝে গোশত বিতরণ করছেন। এর মাধ্যমে ঈদের খুশি পৌঁছে যাচ্ছে এমনসব মানুষদের ঘরে, যারা বছরের পর বছর মাংসের স্বাদ পান না।
আফ্রিকা ছাড়াও কাশ্মীর-মুম্বাইয়েও কোরবানি
শুধু আফ্রিকাই নয়, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সুম্বল, বান্দিপুর, কারগিল অঞ্চলেও কোরবানির পশু পাঠান তিনি। নিজের শহর মুম্বাইয়েও ছাগল কোরবানি দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ১,৫০০ মানুষের মাঝে গোশত বিতরণ করেন।
এছাড়া তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলি উৎসবেও দান-উপহার পৌঁছে দেন দুবাই ও শারজাহর শ্রমিকদের মধ্যে।
একটি উটে আহার পায় তিন শতাধিক পরিবার
নলওয়ালা জানিয়েছেন, একটি উট কোরবানি দিয়ে প্রায় ৩০০টি পরিবারে গোশত বিতরণ করা যায়। কোরবানির পশু স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় এবং স্বচ্ছতার জন্য প্রতিটি পর্যায়ের ছবি সংরক্ষণ করা হয়।
দান নয়, এটি তার জীবনচর্চা
এক সময় শারজাহের আঙ্কর অ্যালাইড ফ্যাক্টরির প্রেসিডেন্ট ছিলেন হুসেইন নলওয়ালা। অবসরের পর গড়ে তোলেন ‘দ্য নলওয়ালা ফাউন্ডেশন’, যার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এই দাতব্য কার্যক্রম।
নলওয়ালার জীবনে মোড় আসে পাঁচ বছর আগে ইয়েমেন সফরের সময়। সেখানে ভয়াবহ দারিদ্র্যের চিত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেন—জীবনের বাকিটা সময় তিনি মানবসেবায় উৎসর্গ করবেন।
তিনি বলেন,
“ঈদ শুধু উৎসব নয়, এটি আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির সময়।
দান আমার কাছে উৎসব নয়, এটি জীবনধারা।”
বৃদ্ধদের জন্যও কাজ করছেন নলওয়ালা
মুম্বাইয়ের বোইসারে তিনি একটি বৃদ্ধনিবাস প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে পরিত্যক্ত ও অসহায় প্রবীণরা আশ্রয় পান। শুধু আশ্রয়ই নয়, এই বৃদ্ধদের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করে সমাজে অবদান রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
অনুপ্রেরণার প্রতীক হুসেইন আহমেদালি।
হুসেইন আহমেদালি নলওয়ালা কেবল একজন প্রবাসী নন—তিনি এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তার জীবন আমাদের শেখায়, কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও সেবা।
সূত্র: খালিজ টাইমস